পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
প্রায় ২০ বছর আগে ওই গ্রামের প্রথম কিডনি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে একজন মারা যান। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন এই রোগে মারা গিয়েছেন বলে দাবি গ্রামবাসীদের। দিন চারেক আগে বিষয়টি জানতে পেরে গ্রামে আসেন এলাকার বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন মন্ত্রীর হাতে আক্রান্তের নামের তালিকা তুলে দেন গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী হাসান মিঞা। তিনি নিজেও এই রোগে আক্রান্ত। মন্ত্রী সমস্যা সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসার কথা বলেন। সেই মতো এদিন বিকেলে রামপুরহাট মহকুমা শাসকের কনফারেন্স হলে বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল কৃষিমন্ত্রী, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন বিভাগের এইচওডি, রামপুরহাট মহকুমার পিএইচইর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুজয় চৌধুরী, মহকুমা শাসক নাভেদ আখতার, রামপুরহাট-১ বিডিও দীপান্বিতা বর্মন, জনপ্রতিনিধি ও আক্রান্ত গ্রামবাসীদের কয়েকজন।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রামানুজ সিংহ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে জল থেকেই এই রোগ ছড়িয়েছে। পিএইচই দাবি করে, ওই এলাকায় দপ্তরের কোনও পানীয় জলের প্রকল্প নেই। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে টিউবওয়েলগুলি বসানো হয়েছে। মন্ত্রী সেখানে বিকল্প পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য পিএইচইকে বলেন। সুজয়বাবু জানিয়েছেন, একমাত্র ব্রাহ্মণী নদী থেকে জল তুলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রামে সরবরাহ করা সম্ভব। কিন্তু, বড় প্রজেক্টের জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। আশিসবাবু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
ওই এলাকায় ৩০০ মিটারের মধ্যে পাথর খাদান রয়েছে। পাথর উত্তোলনের জন্য সেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। জলের সঙ্গে সেই বিস্ফোরক মিশে এই রোগ ছড়াতে পারে। সেই জন্য এলাকার মাটি ও বাতাসের গুণমাণ পরীক্ষার প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা বলেন, যাঁরা মারা গিয়েছেন বা আক্রান্ত তাঁদের কেউ জেলার কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা করাননি। ফলে কেস হিস্ট্রি না দেখে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ওই গ্রামের একটি টিউবওয়েলের জল পরীক্ষা করে আয়রন পেয়েছি। তবে ক্যাডনিয়াম, ক্রোমিয়াম, লেড, মার্কারি ও আর্সেনিক পরীক্ষার জন্য জলের নমুনার আরও ভালো করে পরীক্ষার প্রয়োজন। সিএমওএইচ বলেন, যাদবপুর, সল্টলেক ও স্কুল অব টপিক্যাল মেডিসিনে জলের নমুনা পাঠানো হবে। আপাতত বুধবার থেকে গ্রামে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের একটি দল পাঠানো হবে। তাঁরা আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসা করবেন। তিনি বলেন, এই জেলায় নেফ্রোলজিস্ট নেই। মেডিক্যাল কলেজে একজন নেফ্রোলজিস্ট চেয়ে রাজ্যে আবেদন করা হবে।
এদিন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এতদিন গ্রামের আশাকর্মী কী করছিলেন? কেন আমাদের কাছে এই খবর পৌঁছলো না? ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তাঁকে জানান, ওই গ্রামে আশাকর্মী নেই। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও প্রথম ও দ্বিতীয় এএনএমও নেই। মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য ডেপুটেশনে ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এএনএমকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, টিউবওয়েলের জল পান বা রান্নার কাজে ব্যবহার না করার জন্য মাইকিং করতে বলা হয়েছে। আপাতত পানীয় জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হবে ওই গ্রামে। এছাড়া পিএইচইর পক্ষ থেকে পানীয় জলের পাউচও দেওয়া হবে। তবে কী থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে তা এখন বলা সম্ভব নয়। তার খোঁজেই জল, মাটি ও বাতাসের গুণমাণ সবটাই নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়েছে।