বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
এদিন বিকেলে দমদম বিমানবন্দরে দেহ এসে পৌঁছয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সড়কপথে কফিনবন্দি দেহ পলাশীপাড়া আনা হয়। সেখানে ছিলেন, রাজ্যের দুই মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও রত্না ঘোষ, জেলা সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু, এলাকার বিধায়ক তাপস সাহা। ছিলেন সিআরপির ডিজি ভিকে সিং, জেলার পুলিস সুপার রূপেশ কুমার সহ পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। এদিন বিধায়ক তাপস সাহার মোবাইলে ফোন করে সুদীপবাবু ভগ্নিপতি সমাপ্ত বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে সমবেদনা জানান। সব সময় পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেন তিনি।
এদিন শহিদ জওয়ানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এক সময়ের সহকর্মী সিআরপিএফ জওয়ান কৃষ্ণনগরের সোমনাথ দে। সোমনাথবাবু সুদীপের মা মমতাদেবীকে সান্ত্বনা দেন। তিনি বলেন, আমি একসময়ে মাওবাদী হামলায় পড়েছিলাম। কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছি। এদিন শহিদ জওয়ানের স্মরণে হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠ থেকে মোমবাতি মিছিল করে তাঁর বাড়িতে যায়। শহিদ জওয়ানের বাড়িতে যান তাঁর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি মঞ্চ তৈরি করেন গ্রামবাসীরা। সেখানেই তাঁর কফিনবন্দি দেহ রাখা হয়। সেখানেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিন শহিদ সুদীপের মা মমতাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২০১৫সালের অক্টোবর মাসে সিআরপিএফের চাকরিতে যোগ দেয়। শিলিগুড়িতে প্রশিক্ষণ শেষে অরুণাচল প্রদেশে তার পোস্টিং হয়। সেখান থেকে চলে যায় কাশ্মীর। ডিসেম্বর মাসে ২৫দিনের ছুটিতে সুদীপ বাড়ি এসেছিল। গত ১৫জানুয়ারি শেষবারের মতো বাড়ি থেকে কর্মস্থলে রওনা দেয়। বাড়ি থেকে জম্মুতে পৌঁছনোর পর সেখানে ওই ব্যাটেলিয়ানের অন্য এক জওয়ান অসুস্থ হওয়ার কারণে তাঁকে জম্মুতে থেকে যেতে হয়। বৃহস্পতিবার ৫৪নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানদের সঙ্গে সুদীপ কাশ্মীর যাচ্ছিল। সেইসময় বিস্ফোরণ হয়। তাতেই সব শেষ হয়ে গেল।
শহিদ সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। সুদীপের ভগ্নীপতি সমাপ্ত বিশ্বাস জানান, সুদীপের বাবা সামান্য জমিতে চাষবাস করে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার চালান। সুদীপ এই চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর একটু একটু করে সংসারের হাল ফিরছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। সুদীপের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখার কাজও শুরু হয়েছিল। মাসখানেক আগে নতুন একটি বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করেছিলেন সুদীপ। কিন্তু শুক্রবার সকালে মোবাইলে মর্মান্তিক খবর আসে।
শহিদ সুদীপের প্রতিবেশীরা জানান, অত্যন্ত সাধাসিধে ও মিশুকে ছেলে ছিলেন সুদীপ। এখনও ছুটিতে বাড়ি ফিরলে সবার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতেন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া কিংবা খেলার মাঠে খেলতে যাওয়া সুদীপের নেশা ছিল। একমাত্র ছেলে সুদীপের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার তো অথৈ জলে পড়লই পাশাপাশি সারাজীবনের জন্য গ্রামবাসী ও বন্ধুরা তাঁকে হারাল। বন্ধুদের আক্ষেপ, এবার আসার সময় কাশ্মীর থেকে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে আসার কথা দিয়ে দিয়েছিল সুদীপের। এভাবে ওর মৃত্যু হবে ভাবতেই পারছি না। দেশের জন্য শহিদ সুদীপকে আমরা ভুলব না।
এদিন শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের দেহ বাড়ি ফেরার পথেই সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রানাঘাটে ৩৪নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রানাঘাটের প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী সহ সমস্ত শ্রেণীর মানুষ মানব বন্ধনের মধ্য দিয়ে শহিদ জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।