পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩০মার্চ ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাতজন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে করঞ্জির দাস পরিবারের বড় ছেলে রূপনারায়ণও ছিলেন। আরও ১১বছর চাকরি ছিল তাঁর। কিন্তু, তার আগেই চাকরি থেকে সারাজীবনের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন রূপনারায়ণ। সেই সময় বাড়িতে এসেছিলেন নেতা¬-মন্ত্রীরা। গান স্যালুটের মাধ্যমে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাড়ির পাশেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল রূপনারায়ণের। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। অনেকেরই মনে ফিকে হতে চলেছে শহিদ রূপনারায়ণের স্মৃতিও। কিন্তু, মা¬-বাবা, স্ত্রী কিংবা পরিবারের লোকজনদের কাছে রূপনারায়ণের স্মৃতি এখনও দগদগেই রয়েছে।
করঞ্জি গ্রামের দুর্যোধন দাসের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছিলেন রূপনারায়ণ। বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় বিস্ফোরণে জওয়ানদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মন খারাপ রূপনারায়ণের পরিবারের লোকজনদের। শনিবার বাড়ির বারান্দায় ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বসেছিলেন রূপনারায়ণের মা মঞ্জু দাস। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার এই হামলার খবর পাওয়ার পর ছেলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ছেলে হারানোর শোক কী, তা আমি বুঝি। আমার কোল খালি হয়ে গিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন টাকা দিয়েছিল। আর কোনও সাহায্যের আশা করি না। এখন তো আমাদের কান্নাই সম্বল। আর কোনও জওয়ানের পরিবারের যাতে এই পরিস্থিতি না হয়, এটাই চাইব।
চার বছরের ছেলে সায়নকে নিয়ে থাকেন কৃষ্ণাদেবী। ছেলে কাঁথির একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করছে। কান্না ভেজা গলায় কৃষ্ণাদেবী বলেন, সেদিনের ওই ঘটনার কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে। নিজেকে আর সামলাতে পারছি না। আমার মতো অনেক স্ত্রীর সিঁথির সিঁদুর মুছে যাচ্ছে। মায়ের কোল খালি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে? কালক্ষেপ না করে সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করি। স্বামীর মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সবরকম আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু, বহু চেষ্টা এবং দৌড়ঝাঁপ করেও আজ পর্যন্ত পেনশন চালু হল না। সেই সময় অনেক নেতা-মন্ত্রী এখানে এসেছিলেন। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, পেনশন পেতে দেরি হচ্ছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। তাছাড়া শহিদের পরিবারের লোকজনরা কেমন আছেন, এখন তা কেউ খোঁজখবরই নেয় না। পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা তো দূর অস্ত। এটাই আমাদের কাছে বড় আক্ষেপ। স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়েই থাকতে চাই। পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়ির কাছেই স্বামীর একটি আবক্ষ মূর্তি এবং শহিদবেদি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রূপনারায়ণের স্কুল কাঁথির ক্ষেত্রমোহন বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ত্রিপাঠী বলেন, আমরা শহিদ রূপনারায়ণের নামে একটি স্মারক স্মৃতি কক্ষ এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য রূপনারায়ণ স্মৃতি পুরস্কার চালু করার চিন্তাভাবনা নিয়েছি। কিন্তু, এভাবে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে জওয়ানদের শহিদ হওয়ার ঘটনা বন্ধ না হলে নব প্রজন্মকে তাঁদের পরিবার সেনাবাহিনীতে পাঠাতেই চাইবেন না।