কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করে তুলেছিলেন সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস। ছোট্ট সুদীপ ধীরে ধীরে বাড়ির অভিভাবক হয়ে উঠেছিল। তা উপলব্ধি করে মনে মনে গর্বিত হয়ে উঠতেন সন্ন্যাসীবাবু। মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা আগেও বাবাকে ফোন করেছিলেন সুদীপ। কিন্তু এক ধাক্কায় যেন সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেল। ছেলের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। তাঁর একটাই আক্ষেপ, এভাবে আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার আর কেউ রইল না।
সন্ন্যাসীবাবু বলেন, ওইদিন বেলা ১০টা নাগাদ আমি মাঠের কাজ করছিলাম। সেই সময় সুদীপ ফোন করে। সুদীপ আমাকে বলে, রোদের তাপ বেড়েছে। শরীর খারাপ করবে, তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও। আমি ওর কথা শুনে বাড়ি চলে আসি। ছেলে প্রতিদিনই ফোনে আমাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলত। এরপরই কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এখন কে এভাবে প্রতিদিন আমার খোঁজ নেবে?
দিনমজুরি করে ছেলেকে অনেক কষ্ট করে বড় করেন সন্ন্যাসীবাবু। একমাত্র মেয়ে ঝুম্পার বিয়ে দিয়েছেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে সুদীপ সিআরপিএফের চাকরিতে যোগদান করার পরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা একটু একটু করে ভালো হচ্ছিল। শিলিগুড়িতে ট্রেনিং শেষে তাঁর পোস্টিং হয় অরুণাচলপ্রদেশে। সেখান থেকে তাঁর পোস্টিং হয় কাশ্মীরে। ডিসেম্বর মাসে তিনি ছুটিতে ২৫দিনের জন্য বাড়িতে আসেন। বাড়ি থেকে ১৫জানুয়ারি জম্মুতে যান। সেখানে ব্যাটেলিয়নের একজন জওয়ান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে দেখভালের জন্য জম্মুতেই থেকে যেতে হয় সুদীপকে। ওইদিন ৫৪নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানদের সঙ্গে কাশ্মীর রওনা দেন তিনি। যাওয়ার পথেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
এদিকে, সবসময় হাসিখুশি, মিশুকে গ্রামের ছেলের আকষ্মিক চলে যাওয়ার খবর এখনও যেন মানতে পারছেন না সুদীপের বন্ধুবান্ধব থেকে প্রতিবেশীরা। গ্রামের বাসিন্দারা এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতির অভিযোগ করছেন। সুদীপের এক বন্ধু প্রলয় বিশ্বাস বলেন, ও ছুটিতে বাড়ি এলেই আমাদের সঙ্গেই থাকত। ও সবার সঙ্গে সহজেই মিশে যেত। সবার খোঁজ নিত। ও যে এভাবে চলে যাবে ভাবতে পারছি না। গ্রামের বাসিন্দা শচীন বিশ্বাস, সাহাবুদ্দিন মল্লিক ও বরুণ সিনহা বলেন, এই ঘটনার দায়ভার কে নেবে। সরকারের অপদার্থতায় এত জওয়ানের প্রাণ গেল। জম্মু কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। গোয়েন্দা বিভাগ ৮-১০ দিন আগে সতর্ক বার্তা দিলেও কেন্দ্রীয় সরকার কেন ব্যবস্থা নেয়নি? গ্রামবাসীদের একটাই দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কড়া শাস্তি চাই।