রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া পাথর খাদান এলাকায় পাইকপাড়া গ্রাম। গ্রামে প্রায় ১৪০০ মানুষের বসবাস। অভিযোগ, ২০ বছর আগে এই গ্রামের একজন প্রথম কিডনি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই সময় গ্রামের মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। এরপর একে একে প্রায় ৮০জন একই রোগে মারা গিয়েছেন বলে দাবি গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁরা বলেন, প্রথম দিকে ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। রোগ না সারায় তাঁরা বর্ধমানে চিকিৎসকের পরামর্শমতো নানা পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন অসুস্থরা কিডনির রোগে আক্রান্ত। তাঁদের দাবি, জল থেকে এই রোগে গ্রামের বাসিন্দারা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এখনও গ্রামের বেশ কয়েকজন এই রোগের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বছর পঁয়তাল্লিশের আলাউদ্দিন মিঞা মারা যান। গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিঞা বলেন, আমার স্ত্রী দু’বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত। এখন কিডনির ডায়ালিসিস চলছে। রোগের জন্য সামান্য যেটুকু জমি ছিল, বিক্রি করতে হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন জল থেকে এই রোগ হয়েছে। কিন্তু, বিকল্প না থাকায় বিপদ জেনেও টিউবওয়েলের জলই পান করতে হচ্ছে।
গ্রামের আর এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে এই রোগ দেখা দেয়। ২০১৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এই রোগে ভুগে প্রায় ১৮জন মারা গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিষজল পান করছি। পরিস্রুত জল পৌঁছে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু, সমস্যার কথা কি কাউকে কোনওদিন জানিয়েছেন? উত্তরে গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, নেতারা তো সবই জানেন। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। কাকে জানাতে যাব বলুন?
একের পর এক কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবর কানে পৌঁছতেই এদিন সকালে গ্রামে আসেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মৃত ও আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য হাসান মিঞা এদিন মন্ত্রীর হাতে ৩৯জন আক্রান্তের তালিকা তুলে দেন। হাসান সাহেব বলেন, বেশ কয়েক বছরে একশোর কাছাকাছি মানুষ কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। বর্তমানে ৩৯ জন আক্রান্ত। তাঁর মধ্যে চারজনের ডায়ালিসিস চলছে। গ্রামের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর কাছে আবেদন রেখেছি, যাতে আক্রান্তদের সবাই বিনা খরচে চিকিৎসার সুযোগ পান ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাতে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, প্রায় ৩৯ জন এখনও পর্যন্ত কিডনির রোগে আক্রান্ত। আমি খুবই মর্মাহত। কেন এতদিন এই সমস্যা জানতে পারলাম না? এদিন আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বলেন, আক্রান্তদের হাজার হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এতদিন তাঁরা আমাকে কোনও কথাই বলেননি। মানুষজন কেন কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তা জানতে দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসব। সেখানে সিএমওএইচ, এসডিও, বিডিও, প্রধান ও পিএইচই দপ্তরের আধিকারিকরা থাকবেন। আমরা গ্রামবাসীদের পাশে রয়েছি। এদিনই ডিরেক্টর হেল্থ সার্ভিসেসকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।
এদিন মন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামে এসে স্বাস্থ্য ও পিএইচই দপ্তরের আধিকারিকরা সার্ভের কাজ শুরু করেছেন। রামপুরহাট-১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রামানুজ সিংহ বলেন, জল থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আমরা সার্ভের কাজ শুরু করেছি। জলে সেরকম কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অনেক সময় জলে আর্সেনিক থাকলে এই রোগ ছড়ায়। আবার জন্মগত বা সংক্রমণ থেকেও কিডনির রোগ হতে পারে। এছাড়া ওই এলাকায় পাথর তুলতে খাদানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেই বিস্ফোরক কোনওভাবে জলের সঙ্গে মিশছে কি না সবটাই আমরা দেখছি।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি লিটার জলে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকা মানেই তা মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এই বিষ শরীরে ঢোকার পর উপসর্গ প্রকাশ পেতে ছ’মাস থেকে ২০বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এর থেকে কিডনি, লিভার অকেজো হয়ে পড়ে। ক্যান্সারও হয়।