গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ পাওয়ার সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
২০০২সালে ধীরেন্দ্রনাথবাবু চিকিৎসক হিসেবে প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন। ২০১৪ সালে তিনি রামপুরহাট হাসপাতালে যোগ দেন। হাসপাতালের সামনে একটি বাড়িতে তিনি থাকতেন। দুঃস্থ পরিবারে বড় হয়ে ওঠা ধীরেন্দ্রবাবু ব্যবহার ও চিকিৎসা পরিষেবার জন্য অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। যা অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে পরিবারের অভিযোগ। তিনি নির্দিষ্ট কয়েকটি নার্সিংহোম ছাড়া প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করতেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন তিনি ইমার্জেন্সি অন কল ডিউটিতে ছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে কল পেয়ে তিনি এক প্রসূতিকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তারপরই পায়ে হেঁটে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। সেইসময় মনোজ লেট নামে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক বাইক নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, দু’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে দাঁড়াই। দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু বলতে পারব না। তখন রাস্তা প্রায় শুনশান ছিল। চিকিৎসককে দেখে চিনতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে দু’জনকেই উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওঁর মাথার পিছনে আঘাত ছিল। অপরজন রামপুরহাটের রেলপাড়ের বাসিন্দা সঞ্জু শেখের মাথা ফেটে যায়। তিনি বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, হাসপাতালের পক্ষ থেকে দায়ের করা এফআইআরে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কালুহা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা নার্সিংহোমের মালিক আলিম খান বলেন, সেই সময় আমরা হাসপাতালের বাস স্টপেজের সামনে বসেছিলাম। দ্রুতগতিতে আসা বাইক চালক চিকিৎসককে পিছন থেকে ধাক্কা মারেন। যদিও বাইক চালক বলেন, আমার বাইকের সঙ্গে চিকিৎসকের ধাক্কা লাগেনি। আমি নলহাটিতে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলাম। পিছন থেকে আসা একটি লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গার্ডরেলে ধাক্কা লেগে আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
এদিকে ধীরেন্দ্রনাথবাবুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে আসেন তাঁর পরিবারের লোকজন। তাঁর বাবা লক্ষ্মণ মুর্মু বলেন, ধীরেন্দ্র ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো। তাই চাষের কাজ করেও তাঁকে পড়িয়েছিলাম। ধীরেন্দ্র চিকিৎসক হওয়ার পর অনেক পাত্রীর খোঁজ এসেছিল। কিন্তু সে বিয়েতে রাজি হয়নি। এনিয়ে আমার সঙ্গে মন কষাকষি হয়। ছেলে পাঁচ বছর বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ইদানীং সে বাড়ি আসছিল। গত সোমবার কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি এসেছিল। এই সপ্তাহের শেষে ফের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। অনেকে বলছে এটা দুর্ঘটনা। আমি চাই ছেলের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করুক পুলিস। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অমার মনে হচ্ছে।
মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার ডাঃ শর্মিলা মৌলিক বলেন, আমি শুনেছি উনি রাতে হাসপাতালে ডিউটিতে আসছিলেন। সেই সময় পিছন থেকে একটি বাইক তাঁকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এব্যাপারে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রামপুরহাট শাখার সম্পাদক ডাঃ দেবব্রত দাস বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা চাই তদন্ত করে দোষীকে শাস্তি দিক পুলিস।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি এই হাসপাতালের আরএক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কালীপ্রসাদ অধিকারীর(৩৩) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যু ঘিরেও ওই সময় রহস্য দেখা দেয়। বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। এদিকে বেছে বেছে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এভাবে মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতাল চত্বরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।