বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
এতদিন বিভিন্ন সমবায় সমিতির সদস্য চাষিরা ঋণ নিতেন সমিতির মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সমবায় সমিতিগুলিতে চাষিদের নামে টাকা পাঠাত। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠত, সমবায় সমিতির ম্যানেজার বা সমিতির কর্তারা ঋণের পুরো টাকা চাষিদের হাতে তুলে দিতেন না। চাষিদের হাতে পুরো টাকা পৌঁছত না। মাঝখানে মিডলম্যানরা লাভবান হতেন। অভিযোগ, কিছু সমবায়ের ম্যানেজারও টাকা আত্মসাৎ করতেন। কিছু কিছু সমবায় ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। এবার ওই পদ্ধতির বদল আনছে নদীয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। তাতে সহায়তা করছে নাবার্ড।
কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সমবায় সমিতির সদস্য চাষিদের রু-পে কেসিসি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এটিএম কার্ডের মতোই ওই কার্ড। চাষিরা ঋণের জন্য আবেদন করলে, সরাসরি চাষির অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে। সমবায় সমিতিগুলিতে একটি করে এটিএমের মতো ছোট মেশিন থাকবে। সেখান থেকে চাষিরা নিজের হাতে সরাসরি টাকা তুলতে পারবেন। মাঝখানে সমিতির ম্যানেজার বা সমিতির কোনও কর্তা থাকবেন না। ওই রু-পে কার্ড চাষিরা সেভিংস অ্যাকাউন্ট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যান্য এটিএম থেকেও টাকা তুলতে পারবেন।
নদীয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক ১ লক্ষ ২ হাজার ৫১৪জন চাষিকে রু-পে কেসিসি কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৬ হাজার চাষিকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছর থেকে এই কার্ড বিলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেসব চাষি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ঋণ নেন ও ঋণ পরিশোধ করেন, তাঁদেরই এই কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এজন্য নদীয়া জেলায় আপাতত ২৪৮টি মিনি এটিএম মেশিন প্রয়োজন। ওই মেশিনগুলি এখনও আসেনি। মেশিনগুলি এলেই বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে বসানো হবে এবং সেখান থেকে চাষিরা সরাসরি টাকা তুলতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, বাম আমলে সমবায় সমিতিগুলি কার্যত দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছিল। সমবায় সমিতির অনেক ম্যানেজার চাষিদের নামে টাকা তুলে নিজের পকেটে ভরতেন। চাষিদের হাতে সেই টাকা যেত না। ফলে সমবায় সমিতিগুলি নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা প্রায় তলানিতে ঠেকেছিল। নতুন সরকার সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। প্রায় প্রতিটি সমবায় সমিতি স্বচ্ছভাবে কাজ করছে। এবার রু-পে কার্ডের মাধ্যমে চাষিরা নিজের টাকা নিজ হাতে তুলবেন।
নদীয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী বলেন, রু-পে কেসিসি কার্ড আমরা বিলি শুরু করে দিয়েছি। এক লক্ষ দুই হাজার চাষিকে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এই কার্ডের মাধ্যমে আরও স্বচ্ছতা আসবে। দুর্নীতি ঠেকানো যাবে।
জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বর্ষে ১লক্ষ ১২ হাজার চাষি ঋণ নিয়েছেন। ঋণের পরিমাণ ২২০কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তারা জানান, জমির দলিল রেখে চাষিকে ঋণ দেওয়া হয় ৭ শতাংশ হারে। সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারলে সুদের ৩ শতাংশ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। অর্থাৎ চাষি ৪ শতাংশ হারে ঋণ পান। বোরো, আমন ধান, আখ, পাট ও সব্জি চাষের জন্য ঋণ নিয়েছেন চাষিরা। সমবায়ের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন।
নদীয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান গণপতি মণ্ডল বলেন, চলতি আর্থিক বর্ষে ২২০ কোটি টাকা চাষিদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন। আগে চাষিরা ঋণের জন্য মহাজনদের কাছে যেতেন। এখন চাষিরা স্বল্প সুদে সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন।