কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
জেলার পুলিস সুপার মুকেশ কুমার বলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে পুলিস সর্বদা সতর্ক রয়েছে। এজন্য সীমান্তবর্তী গ্রামে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। বিএসএফের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়েছে। তাই অনুপ্রবেশকারীরা ধরাও পড়ছে।
রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদ অন্যতম। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৬৭কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। এরমধ্যে প্রায় ১২৬কিলোমিটার এলাকাই উন্মুক্ত। কাঁটাতারের বেড়া নেই। সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশই জলসীমান্ত। অর্থাৎ, দু’দেশের সীমান্ত দিয়ে পদ্মা, জলঙ্গি সহ বিভিন্ন নদী প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে অনেক জায়গায় চর পড়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে ভারতীয় চাষের জমি। তাছাড়া, এখন কুয়াশারও দাপট রয়েছে। তাই সীমান্তের ভৌগোলিক অবস্থান ও কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে এপারে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে বাংলাদেশিরা। একইসঙ্গে জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশি গোরুপাচার চক্র। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাংলাদেশি পাচারকারীরা এপারে এসে সেই দেশে গোরু পাচার করছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গোরু পাচারকারীকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে।
সব মিলিয়ে জেলায় ইদানীংকালে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। সোমবার লালগোলা স্টেশনের কাছ থেকে পাঁচজন বাংলাদেশিকে ধরা হয়। পুলিস জানিয়েছে, একদিন আগে লাইনম্যানের হাত ধরে বাংলাদেশ থেকে এপারে আসে তারা। স্থানীয় কোনও বাসিন্দার বাড়িতে একরাত কাটিয়ে তারা ভিনরাজ্যে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিল। সোর্স মারফৎ খবর পেয়ে পুলিস তাদের ধরে। পুলিসি জেরায় তারা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের কথা স্বীকারও করেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে গত ২০জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় অনুপ্রবেশ আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৩জনকে। এমন ধৃতের সংখ্যা সূতি থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি, ১৮জন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাংলাদেশি গোরুপাচার চক্রের দাপটও বেশি। এছাড়া, লালগোলায় ৮জন, জলঙ্গিতে একজন, রানিনগর ও রানিতলা থানায় তিনজন করে বাংলাদেশি ধরা পড়েছে।
এর বাইরে বাংলাদেশি সন্দেহে এই জেলার ১৩ জন বাসিন্দার সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে মুম্বই পুলিসের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। তারা এ ব্যাপারে গত সেপ্টেম্বর ও চলতি মাসে জেলা প্রশাসনের কাছে দু’টি চিঠি পাঠিয়েছে। মুম্বই পুলিসের সিআইডি চিঠিগুলিতে জানিয়েছে, মুম্বইয়ের ক্যান্ডিভ্যালিতে মুর্শিদাবাদের ১৩জন বসবাস করছেন। বহরমপুর, হরিহরপাড়া, বেলডাঙা, ভগবানগোলা ও লালবাগ এলাকায় তাদের বাড়ি। নির্দিষ্ট সোর্সের তথ্য অনুসারে, তাদেরকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাই তাদের ভোটার কার্ড যাচাই করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুম্বই পুলিসের চিঠি পাওয়ার পর ওই বাসিন্দাদের ভোটার কার্ড যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩জনের মধ্যে ১১জনের ভোটার কার্ড যাচাই করা হয়েছে। বাকি দু’জনের ভোটার কার্ড যাচাইয়ের কাজ চলছে। তবে ওই ১১জনের নাম এখানকার ভোটার তালিকায় আছে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই মুম্বই পুলিসের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।
২৬ জানুয়ারির আগে এহেন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী এই জেলা পুলিসের কাছে মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিস ও গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সাধারণতন্ত্র দিবসের মুখে নাশকতা ঘটাতে টার্গেট করে জঙ্গি ও জেহাদি সংগঠনগুলি। এজন্য তারা ওপার থেকে এপারে আসার চেষ্টা করতে পারে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে বিশেষ দল গড়েছে জেলা পুলিস। দুই অতিরিক্ত পুলিস সুপার এবং চারজন এসডিপিও ওই দলে রয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে নিয়মিত সীমান্তবর্তী গ্রামে, সীমান্তবর্তী থানা এলাকার বাজার, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড প্রভৃতি এলাকায় টহল চলছে। বিএসএফও সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। প্রয়োজন পড়লে পুলিস ও বিএসএফ যৌথ টহল দিচ্ছে। এমনকী, স্পিড বোট নিয়ে নদীতে টহল দেওয়া হচ্ছে।