কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
স্থানীয় ও বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে অনিলবাবু ও গ্রামের যুবক আনন্দ পরামানিক ওরফে ফুচা করমাবুরুর জঙ্গলে শুকনো কাঠ আনতে যান। দুপুরে আনন্দ গ্রামে ফিরে এলেও অনিলবাবু ফিরতে পারেননি। সন্ধ্যায় অনিলবাবুর পরিবারের সদস্যরা জঙ্গলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অন্ধকার নেমে আসায় এবং হাতিটি ওই জঙ্গলে থাকায় জঙ্গলের বেশি গভীরে যেতে পারেননি। শুক্রবার সকালে বনদপ্তর, পুলিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের যৌথ একটি দল জঙ্গলে প্রবেশ করে। কয়েকঘণ্টার চেষ্টায় জঙ্গলে চিরিজল ঝর্ণার কাছে অনিলবাবুর নিথরদেহ উদ্ধার করে বনদপ্তর, পুলিস ও গ্রামবাসীদের যৌথ দলটি। দুপুরে মৃতদেহ জঙ্গল থেকে নিয়ে এসে ময়নাতদন্তের জন্য পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মৃতের স্ত্রী মুকুর পরামানিক বলেন, ওইদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে বের হন। দুপুরের ১টার পর ফুচা ছুটতে ছুটতে বাড়িতে এসে জানায়, জঙ্গলে তাদের সামনে ‘হাতিঠাকুর’ পড়েছিল। ফুচা কোনওক্রমে পালিয়ে এসেছে। ফুচা জানায়, স্বামী হাতিঠাকুরের সামনেই ছিল। স্বামীর চিন্তায় ছেলেকে নিয়ে জঙ্গলে যাই। বেশ কিছুটা গিয়েছিলাম। তবে অন্ধকার নেমে আসায় ফিরে আসি। সারারাত ঘুমোতে পারিনি। আশা ছিল, স্বামী হয়তো কোনওক্রমে বেঁচে ফিরবেন। কিন্তু, তাঁর নিথর দেহটাই ফিরল।
আনন্দবাবু বলেন, দু’জনে গল্প করতে করতে জঙ্গলের গভীরে গিয়েছিলাম। অনিলবাবু কয়েকহাত সামনেই হাঁটছিলেন। আচমকা ‘হাতিঠাকুরকে’ দেখতে পাই। হাতিটি অনিলবাবুর একবারে সামনে ছিল। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছিল। অনিলবাবুও পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই সময় ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে পালাতে শুরু করি।
এদিনও বনদপ্তর ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে অনিলবাবুকে খুঁজতে আনন্দ জঙ্গলে গিয়েছিলেন। মৃতের ভাইপো বিকাশ পরামানিক, আত্মীয় দিলীপ পরামানিক বলেন, এদিনও আতঙ্কে বেশি দূর যেতে পারছিলাম না। যে এলাকায় মৃতদেহ পাওয়া গেল তার খুব কাছেই জঙ্গলে হাতির গর্জন শোনা যাচ্ছিল। মৃতদেহ তুলে আনার সাহস হচ্ছিল না। আঘাত দেখে মনে হল, আছাড় মারার পাশাপাশি পা দিয়ে পিষে দিয়েছে হাতিটি। কোনওকরমে মৃতদেহ গাছের একটা ভাঙা ডালে ঝুলিয়ে নিয়ে আসা হয়।
বলরামপুরের করমা গ্রামেরই বাসিন্দা সনাতন পরামানিক, নৃপেন মণ্ডল, হাঁড়িরাম পরামানিক বলেন, হাতির হানায় অনিলবাবুকে নিয়ে গ্রামে মোট তিনজনের মৃত্যু হল। আগের দু’জনের মৃত্যু বেশ কয়েকবছর আগে হলেও তাঁদের মধ্যে একজনের মৃতদেহ খুঁজে আনা সম্ভব হয়নি। তাই অনিলবাবুরও খোঁজও পাওয়া যাবে কি না বোঝা যাচ্ছিল না।