কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০-২৫বছর আগে ওই হাটে বাঁশের তৈরি ঝুড়ির রমরমা বাজার ছিল। প্রতি হাটবারে হাজার হাজার ঝুড়ি আনতেন সেখানকার কারিগররা। এলাকার কাঁতুরহাট, জালিবাগান, একঘড়িয়া, নিমা প্রভৃতি গ্রাম থেকে বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে আসতেন কারিগররা। ঘড়িতে সকাল ৬টা বাজার আগেই তাঁরা সামগ্রী নিয়ে হাটে চলে আসতেন। কারণ, সেখানে ভোর পাঁচটার মধ্যেই কান্দি, ভরতপুর, সালার, নগর ইত্যাদি গ্রামের মহাজনরা চলে আসতেন। তাঁরা কারিগরদের কাছে পাইকারি দরে সেগুলি কেনার পর নিজের এলাকায় বিক্রি করতেন।
নিমা গ্রামের কারিগর রামধনু দাস বলেন, আজ থেকে ২৫বছর আগে ঝুড়ি পাইকারি ৯টাকা দরে বিক্রি করা হতো। একজন বিক্রেতা ৫০থেকে ১০০টি পর্যন্ত ঝুড়ি নিয়ে হাটে আসতেন। সব বিক্রিও হয়ে যেত বেলা ১১টা মধ্যে। এরপর হাটে বাজার করে প্রত্যেকে বাড়ি ফিরে যেতেন।
কিন্তু, বর্তমানে সেই দিন হারিয়ে গিয়েছে। ঝুড়ির বাজারে ভাটা। এর প্রধান কারণ হিসেবে শিল্পীরা জানান, আগে এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বাঁশবন ছিল। ঝুড়ি তৈরির প্রধান কাঁচামাল হিসেবে বাঁশ-কঞ্চির অভাব হতো না। বাঁশবনের মালিককে কিছু টাকা দিলেই ইচ্ছেমতো বাঁশ-কঞ্চি কেটে নেওয়া যেত।
নিমা গ্রামের শিল্পী আলিমুদ্দিন শেখ বলেন, আগের থেকে এখন সময় বদলেছে। আগে এই এলাকার প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক মাটি কাটার কাজে ২৪পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়ায় যেত। তাঁদের মাটি কাটতে গেলে ঝুড়ির দরকার পড়ত। আবার এক-একটি ঝুড়ি একমাসের বেশি যেত না। সেই কারণে ঝুড়ির চাহিদাও বেশি হতো। কিন্তু, এখন মেশিন আসার কারণে ঝুড়িতে মাটি তোলার কাজ অনেক কমে গিয়েছে। তবুও চাহিদা এখনও রয়ে গিয়েছে। তবে চাহিদা থাকলেও, বাঁশ-কঞ্চির অভাবে ঝুড়ি তৈরি করা যাচ্ছে না।
ওই হাটের কর্মী মহম্মদ সফিউদ্দিন বলেন, আগে এখানে প্রচুর বিক্রেতা আসতেন। তবে এখন কয়েকজন আসেন। জালিবাগান গ্রামের কারিগর সুব্রত বিত্তার বলেন, ২০বছর আগে আমাদের গ্রামের অন্তত ১৫জন হাটে ঝুড়ি বিক্রি করতে যেতেন। কিন্তু, এখন তো ঝুড়ি তৈরির সামগ্রীই পাওয়া যাচ্ছে না। এই গ্রাম থেকে এখন আর কেউ হাটে ঝুড়ি বিক্রি করতে যান না। কিছু ঝুড়ি তৈরি হলেও বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।
কান্দির ঝুড়ি দোকান মালিক তারাশঙ্কর দাস বলেন, আগে এলাকায় ঝুড়ির চাহিদা ছিল। তাই আমরা ডাকবাংলা হাটে ঝুড়ি কেনার জন্য যেতাম। কিন্তু এখন চাহিদাও তেমন নেই। আর হাটে ঝুড়িও পাওয়া যায় না। তাছাড়া বর্তমানে প্লাস্টিকের ঝুড়ির ব্যবহার হচ্ছে। আর কিছুদিন পর হয়তো বাঁশের ঝুড়ি পাওয়াই যাবে না।
এদিকে, ঝুড়ি বোনার কাজ না থাকার কারণে বেশিরভাগ কারিগর পেশা বদলে ফেলছেন। কেউ ছোটখাট ব্যবসা করছেন। কেউ আবার দিনমজুরের কাজ করেন। কেউ কাজের খোঁজে শহরে গিয়েছেন। নতুন করে কেউ আর এই পেশায় আসতে চাইছেন না। একঘড়িয়া গ্রামের ঝুড়িশিল্পী আবু তাহের শেখ বলেন, একসময় এই এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষই ঝুড়ি বানাতেন। কারণ ওই পেশায় লাভ ছিল। তবে এখন আর কেউ ঝুড়ি তৈরি করতে চান না। বেশিরভাগই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।