বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একদা খেলাধুলোয় অত্যন্ত ভাল ছিল বিপ্লব। বিশেষ করে হাইজাম্প ও লংজাম্পে সকলের নজর কাড়ত। ঘটনার দিন তার বাঁ পায়ের হাঁটু ছুঁয়ে যায় গুলি। বিপ্লবের মা সরস্বতী সরকার বলেন, ঘটনার দিন শোরগোল শুনে স্কুলে যাই। ছেলে তখনও স্কুলে ছিল। তাই চিন্তা হচ্ছিল। মাঠে প্রচুর পুলিস ও পড়ুয়ারা উপস্থিত ছিল। স্কুলে গিয়ে বিপ্লবের খোঁজ করি। ওর সঙ্গে দেখা করি। স্কুল মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, এমন সময় টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটার শব্দ শুনতে পাই। চারিদিকে হুলুস্থুল। কে যেন বলল, বিপ্লবের গুলি লেগেছে। ওই শুনে আবার স্কুলের দিকে দৌড়ে যাই। দেখি সকলে মিলে বিপ্লবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলছে। বিপ্লব আমাকে বলেছিল, মা আমার কিছু হবে না আমি সুস্থ হয়ে যাব। অনেক চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু ও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ইসলামপুর থেকে শিলিগুড়িতে নিয়ে গিয়েছি ছেলেকে চিকিৎসার জন্য। তারপরে চেন্নাই নিয়ে গিয়েছি। এখনও তার পা সম্পূর্ন ঠিক হয়নি। আমার ছেলে আগে খেলাধুলোয় খুবই ভাল ছিল। অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। সুস্থ হলেও ছেলে হয়তো আগের মতো আর খেলতে পারবে না। সেদিনের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সরস্বতী সরকার।
বিপ্লব বলে, খেলাধুলো খুবই প্রিয় ছিল। পায়ে গুলি লাগার পরে দুই বার অপারেশন হয়েছে। আরেকটা অপারেশন করতে হবে। এখনও পায়ে জোর পাই না। আঙুলগুলি ঠিকমতো নাড়াতে পারি না। সকলকে খেলতে দেখি। আমারও খুব ইচ্ছা হয় খেলতে, কিন্তু পারি না। ঘটনার দিন একটি গুলি আমরা পায়ে লাগে। তার আগেই তাপস ও রাজেশদার গায়ে গুলি লেগেছিল। তাদের সঙ্গে আমাকেও একই গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিনের স্মৃতি আজও দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে আমাকে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে বিপ্লবের দুই দাদা। একজন ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। ছোট দাদা বাড়িতেই চাষ করেন। তার বাবা গোবিন্দ সরকার জ্বালানি কাঠ বিক্রি করে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না। ছেলের চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থের খরচ করতে হিমসিম খাচ্ছিলেন বিপ্লবের বাবা-মা। সেসময় এবিভিপি তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল।
শুধু বিপ্লবের পরিবারই নয়, গোটা দাড়িভিটের মানুষ সেই দিনের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি। নিহতদের পরিবার আজও সুবিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই দিন সেই দাড়িভিট কাণ্ডের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান একবছর আগের স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে। আবেগে অনেকের চোখে জলও দেখা গিয়েছে এদিন।