মনসুর হাবিবুল্লাহ  জলপাইগুড়ি, বিএনএ: জলপাইগুড়িতে দলের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে স্বচ্ছতার মন্ত্রকেই হাতিয়ার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কিষাণ কল্যাণী। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই নতুন ব্লক কমিটি ঘোষণা করেন। তাতে দেখা যায় একাধিক প্রাক্তন ব্লক সভাপতি বাদ পড়েছেন। একাংশ অনুগামী ব্লক কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় জেলা সভাপতির উপর চটেছেন জেলার কয়েকজন বিধায়কও। আর এতেই দেখা যাচ্ছে দলের কিষাণ বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের মাধ্যমে রাজ্য নেতৃত্বকে ওই বিদ্রোহীরা ইতিমধ্যেই বার্তা পাঠিয়েছে। যত দিন গড়াচ্ছে ততই বিদ্রোহীরা নিজেদের পাল্লা ভারী করতে নেমেছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর নাগরাকাটার কমিউনিটি হলে কিষাণ বিরোধীরা নিজেদের শক্তিপ্রদর্শন করতে সমাবেশ করবে।
তৃণমূলের নাগরাকাটার প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের মেন্টর অমরনাথ ঝা বলেন, আমাদের দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ে আজ এই জায়গায় এসেছেন। নাগরকাটায় আমি সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে একাধিকবার জেল খেটেছি। ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে ভরসা রেখে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসি। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট না পেলেও দল বিরোধী কাজ করিনি। দিদি খুশি হয়ে আমাকে জেলা পরিষদের মেন্টর করেছেন। আজ আমাকে দলের কোনও এক নেতার মুখ থেকে শুনতে হচ্ছে আমি না কি অস্বচ্ছ। তাহলে দিদি আমার মেন্টর পদও কেড়ে নিলেন না কেন? এলাকায় তিল তিল করে দলটাকে সাজিয়েছি। এখন আমাকে অপমান করা হচ্ছে। নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি। বিধায়ক খগেশ্বরবাবুর মাধ্যমে রাজ্য নেতৃত্বকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখ নাগরাকাটায় সমস্ত ব্লক সভাপতি, শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকে নিয়ে বিশাল সমাবেশ করা হবে। সেদিনই আমরা শক্তি প্রদর্শন করব।
রাজগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের খগেশ্বর রায় বলেন, জেলার একাধিক বিধায়ক আমার কাছে গত কয়েক দিনে এসেছেন। সবার মতামত রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব। ময়নাগুড়ির বিধায়ক তৃণমূলের অনন্তদেব অধিকারী বলেন, এমন লোকদের ব্লক কমিটিতে রাখা হয়েছে যাদের আমি চিনি না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি কিষাণ কল্যাণী বলেন, স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বুথ স্তর থেকে স্বচ্ছ কর্মীদের তুলে আনা হচ্ছে। দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে সবাইকে নিয়ে কাজে নেমেছি। যাঁরা এতদিন দায়িত্বে থেকে দলকে ব্যবহার করে গিয়েছেন, অনৈতিক কাজকর্মে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা না হয় এখন বিশ্রাম করুন।
লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে শাসক দলের ভরাডুবি হয়। দলের অন্দরেই চর্চ্চা, এর পিছনে ধর্মীয় মেরুকরণ যেমন কাজ করেছে, তেমনই রয়েছে পুরনোদের বসিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস থেকে আসাদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া এবং অবশ্যই ছিল কাটমানি। ভোটের পরপরই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি পরিবর্তন করেন। নয়া সভাপতি কিষাণ কল্যাণী দায়িত্বে এসেই সমস্ত ব্লক কমিটি ভেঙে দেন। পুজার আগেই জলপাইগুড়ি জেলার প্রায় ১৮০০ বুথে খসড়া বুথ কমিটি বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সোমবার দলের বিধায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে সমাজপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকে দলের নতুন ব্লক কমিটি ঘোষণা করেন। বিধায়কদের মাথায় রেখে ব্লক কমিটিগুলি করা হয়। সেই কমিটিই বুথ স্তর থেকে বুথ কমিটির খসড়া তালিকা করবে। নতুন বুথ কমিটিতে একাধিক প্রাক্তন ব্লক সভাপতির নাম বাদ পড়েছে। জলপাইগুড়ি সদর-১, ২, নাগরাকাটা, ময়নাগুড়ি-১, ধূপগুড়ি গ্রামীণ, ধূপগুড়ি শহর, মাল গ্রামীণ, মেটেলি, বানারহাট ব্লকের প্রাক্তন সভাপতিরা নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েন। অনেক কমিটিই বিধায়কদের পছন্দ হয়নি। আর তারপর থেকেই জেলাজুড়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মালে ‘কিষাণ কল্যাণী গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। অনেকেই নয়া সভাপতিকে বিজেপির চর বলে স্লোগান দেন। কিন্তু বিদ্রোহীদের নিয়ে মাথাঘামাচ্ছেন না কিষাণ কল্যাণী। বরং তাঁদের তিনি বাড়িতে বসে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।