বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিকে অবাক নজরে তার এই প্রতিমা তৈরির কাজ দেখে রীতিমতো শিহরিত পরিবারের বাকিরা। বাড়ির ভেতরে একটি ছোট্ট ঘরেই গড়ে উঠেছে ময়াঙ্কের মূর্তি তৈরির কারখানা। মাটি ও কাদা ঘরের সর্বত্র এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজে রয়েছে নৈপুণ্যের ছাপ। আপাতত তার হাতের ছোয়ায় প্রতিমা অনন্য রূপ পেয়েছে। এই প্রথম দেবী দুর্গার প্রতিমা বানালেও এর আগে গতবছর কালী মূর্তি তৈরি করেছিল ময়াঙ্ক। তার তৈরি কালী মূর্তি দিয়ে স্থানীয় একটি ক্লাবের পুজোও হয়েছিল। তবে এবারে বাড়ির জন্য দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছে সে।
ময়াঙ্ক জানায়, এই প্রতিমা তৈরির কাজে তাকে সাহায্য করেছেন ড্রয়িংয়ের শিক্ষক। আর বাড়িতে তার এই কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন তার ঠাকুরদাদা। মূর্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা থেকে শুরু করে কাঠামো তৈরির কাজ— সব ক্ষেত্রেই তার ঠাকুরদাদা তাকে সাহায্য করেছেন। ছোট থেকেই মূর্তি তৈরির কাজের প্রতি আকর্ষণ ছিল ময়াঙ্কের। কিন্তু পড়াশুনোয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় প্রথম দিকে তাকে সেই কাজে খানিক নিরুৎসাহ করতেন ময়াঙ্কের মা তনুশ্রী ভৌমিক। বর্তমানে অবশ্য তিনি ছেলের হাতের কাজে মুগ্ধ। ছেলের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়ে সে যা করতে চাইবে তাই করতে দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।
ময়াঙ্ক বলে, ছোট থেকেই মূর্তি বানিয়ে আমি খুব আনন্দ পেতাম। যখনই সময় পেতাম মাটি, খড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মূর্তি তৈরি করার কাজ করতাম। এর আগেও কালী মূর্তি, বুদ্ধ মূর্তি বানিয়েছি। তবে এবারেই প্রথম দুর্গা প্রতিমা বানাচ্ছি। আমাদের বাড়িতে প্রতিবছর পুজো হয়। বাড়ির পুজোতে আমার তৈরি করা প্রতিমারই পুজো হবে, তা ভেবেই আরও বেশি খুশি হচ্ছি আমি। এবারে পুজোর আনন্দ আরও বেড়ে যাবে।
তার ঠাকুরদাদা রমেশচন্দ্র ভৌমিক বলেন, আমার নাতির হাতের কাজে আমি মুগ্ধ। ছোট থেকেই ওর মূর্তি তৈরির দিকে ঝোঁক ছিল। বাড়ির অন্য সদস্যরা ওকে বাধা দিলেও আমি কখনওই বাধা দিইনি। বরং সাহায্য করেছিলাম ।ওর এই কাজে যখনই কিছু প্রয়োজন হয়, ময়াঙ্ক আমাকে জানায়। ও বললেই আমি যতটা সম্ভব সাহায্য করি।
ময়াঙ্কের মা বলেন, ছোট থেকেই ওর খেলাধুলোর থেকে মূর্তি তৈরিতেই বেশি মনোযোগ ছিল। তবে আমি পড়াশুনোর ক্ষতি হয়ে যাবে ভেবে ভয় পেতাম। তবে ও এখন পড়াশুনো ঠিকভাবে করেও ওর ইচ্ছে পূরণ করে। তাই ভয় কমে গিয়েছে। ওর কাজে আমরা খুব খুশি। আগামীতেও ও আরও ভালো কাজ করুক এটাই কাম্য।
চতুর্থ শ্রেণি থেকেই খড় মাটি সহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে একে একে নানান মূর্তি গড়ার চেষ্টা করে ময়াঙ্ক।অন্যান্য বন্ধুরা যখন খেলাধুলোয় সময় কাটাত সেইসময় নিজের কল্পনা থেকে একে একে নানান মূর্তি গড়ার চেষ্টা করত সে। কখনও পছন্দ না হলে নিজের তৈরি মূর্তি নিজেই আছড়ে ভেঙে ফেলত। প্রতিবেশীরাও এই ক্ষুদে শিল্পীর কাজে মুগ্ধ। নিজের ভেতরে বেড়ে ওঠা শিল্পভাবনা থেকেই এই মূর্তি তৈরির কাজ করে ময়াঙ্ক। দুশ্চিন্তা দূর করে ময়াঙ্কের শিল্পসত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ক্ষুদে এই শিল্পীকে আগামীতে আরও ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহও দিচ্ছেন তাঁরা।