বাংলা নিউজ এজেন্সি: সপ্তাহ দু’য়েক টানা তাপপ্রবাহের পর সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় ঝড়বৃষ্টিতে স্বস্তি পেলেন উত্তরবঙ্গের চার জেলার মানুষ। তবে ঝড়ের তাণ্ডবে বিভিন্ন জায়গায় রাতভর বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি সর্বত্রই ঝড়ের প্রভাবে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় বাড়ি ফেরার পথে মাথায় গাছের ডাল পড়ে মাল থানার তেসিমলার মিঠুমোড়ে মহম্মদ মকসাদুল(৩৪) এবং মহম্মদ বাবলু(৩৫) নামে দুই মোটর বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়। ঝড়ের সময় মোটর বাইকে করে বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার ছিঁড়ে মালবাজারে অজয় ওঁরাও এবং গাছের ডাল ভেঙে তুফানগঞ্জের চিলাখানায় শিবু দাস নামে দুই যুবক গুরুতর জখম হন। স্থানীয় হাসপাতালে দু’জনই ভর্তি আছেন।
মালবাজারের মহকুমার শাসক বিবেক কুমার বলেন, রাতে প্রচণ্ড ঝড়ের সময় গাছের ডাল মাথায় ভেঙে পড়ে দুই মোটর বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়। সরকারিভাবে মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চলছে।
মাদারিহাটের বিডিও শরণ তামাং বলেন, ঝড়ে ব্লকের বেশকিছু কাঁচা বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণও দেওয়া শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
ব্যাপক ঝড়ে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট, তুফানগঞ্জ ও মালবাজার মহকুমায় প্রায় ১৫০টি কাঁচা ঘরের টিনের চালা হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। ডুয়ার্সের অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। রাতেই তুফানগঞ্জে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও মাদারিহাট ও মালবাজার মহকুমায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শিলিগুড়ি মহকুমায় তুমুল ঝড়বৃষ্টি হয়। দমকা হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং ছিঁড়ে গিয়েছে, কয়েক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। ঝড়ের জেরে দীর্ঘক্ষণ শহরে লোডশেডিংও ছিল। তবে শীতল হাওয়া এবং বৃষ্টির জেরে টানা কয়েকদিনের তাপপ্রবাহের পর বাসিন্দাদের স্বস্তি মিলেছে।
মাল মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে আচমকা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিট ঝড় স্থায়ী ছিল। মাল থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। প্রচুর ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে ভেঙে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়। ঝড়ের সময় বাড়ি ফেরার পথে মাল থানার মিঠুমোড়ে গাছের ডাল মাথায় ভেঙে পড়ে ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। কুমলাই চা বাগানের বাসিন্দা অজয় ওঁরাও ঝড়ের সময় বাড়ি ফিরছিলেন। ডামডিমের পোস্টঅফিস মোড়ে ঝড়ে হাইটেনশনের তার ছিঁড়ে পড়লে গুরুতর জখম হন অজয় ওঁরাও নামে এক যুবক। তাঁকে মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকেজুড়েই ঝড় হয়। এখানেও ঝড়ের স্থায়ীত্ব ছিল ৩০ মিনিটের কাছাকাছি। ঝড়ে ব্লকের প্রায় ৩০-৪০টি কাঁচা বাড়ির টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। ঝড়ের দাপট বেশি ছিল রাঙালিবাজনা, শিশুঝুমড়া, হাণ্টাপাড়া, মাদারিহাট, খয়েরবাড়ি ও লঙ্কাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৪টির মতো বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। ঝড়ে ব্লকে প্রায় ৩৫ কিমি এলাকাজুড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। ফলে ব্লকজুড়ে অন্ধকারে নেমে আসে। ভেঙে পড়ে অসংখ্য গাছও। এতে রাতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তুফানগঞ্জ-১ ব্লক ও তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকা জুড়েও সোমবার রাতে ঝড়বৃষ্টি হয়। রাতে অনেকক্ষণ লোডশেডিং থাকে। তবে রাতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। ঝড়ে গাছের ডাল মাথায় পড়ে চিলাখানায় শিবু দাস একজন জখম হন। তাঁকে কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির আমগুড়িতেও সোমবার রাতে ঝড় হয়। ঝড়ে কয়েকটি দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।