বিএনএ, শিলিগুড়ি: টাকা বরাদ্দ হলেও শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটে অত্যাধুনিক মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা যায়নি। নির্মাণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা শেষ পর্যন্ত অন্য খাতে খরচ করতে হয়েছে। বুধবার বিধান মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এমনটা দাবি করেছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার গভীর রাতে আগুন লেগে বিধান মার্কেটে সাতটি দোকান পুড়ে যায়। ক্ষতি হয় কয়েক লক্ষ টাকা। গত ডিসেম্বরেও মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে গিয়েছিল। এদিন সেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন গৌতমবাবু। দীর্ঘ বছর ধরে এই বাজারটি ভেঙে নতুন করে মার্কেট কমপ্লেক্স করার দাবি উঠছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হয়েই গৌতমবাবু শিলিগুড়ির এই গুরুত্বপূর্ণ বাজারটিকে ভেঙে অত্যাধুনিক মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। প্রথমে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের জানানো হলেও পরে তিনি জানান মার্কেট তৈরির জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ওই বাজার তৈরি করতে বাধা দেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ভাবে স্রেফ প্রমোটারি ব্যবসা করার জন্য অত্যাধুনিক মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছিল। শুরুতেই ওই জটিলতায় শেষ পর্যন্ত মার্কেট নির্মাণের কাজ আটকে যায়। প্রায় সাত পেরিয়ে গেলেও সেই কাজ আর হয়ে ওঠেনি। গৌতমবাবু বলেন, আমি অত্যাধুনিক মার্কেট করতে চেয়েছিলাম। এর জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একাংশের বিরোধিতায় সেই কাজ করা যায়নি। বহুবার আলোচনায় বসেও জটিলতা কাটানো যায়নি। যার ফলে বরাদ্দ টাকা অন্যখাতে করা হয়েছে। এসজেডিএও চেষ্টা করেছিল। বর্তমান এসজেডিএর চেয়ারম্যান বিজয় বর্মন দিল্লিতে আছেন। তিনি ফিরলে তাঁর সঙ্গে আবার বসব। মার্কেট তৈরির বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। শিলিগুড়ি বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহা বলেন, আমরা চাইছি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার করা হোক। এর আগেও এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বহুবার গিয়েছি। কিছুই হয়নি। বাজারের আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির বিষয়ে আমরা আবার ১৭ জুন এসজেডিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে যাব।
প্রায় ৯ একর জায়গা নিয়ে বিধান মার্কেটটি উদ্বাস্তু ল্যান্ড ছিল। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৯৮১ সালে ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে রেখে আচমকা ওই জমি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে উদ্বাস্তু ল্যান্ডের পাট্টা দেওয়া হলেও বিধান মার্কেটের জমির সমস্যা মেটেনি। বহুবার জমি সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও তা হয়নি। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার গঠন হওয়ার পর তৎকালীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু অত্যাধুনিক মার্কেট করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে মার্কেট তৈরির শিলান্যাস করারও চূড়ান্ত হয়ে যায়। ঠিক হয় আণ্ডার গ্রাউন্ডে পার্কিং হবে। তারউপর পাঁচতলা বিল্ডিং হবে। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দিয়ে দ্রুত মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে বলেও পাকা হয়ে যায়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যেভাবে মার্কেট তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল তা ছিল অবৈজ্ঞানিক। যতুগৃহ বাজারের সমস্যা কোনওভাবেই মিটত না। সঠিকভাবে মার্কেট তৈরি করে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার থেকে তা ব্যবসা করে মুনাফা লাভের চেষ্টা হয়েছিল। যা ব্যবসায়ীরা মানতে চাননি। অভিযোগ, বাজারে কিছু বেআইনি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ চাইছেন না। যার ফলে আর মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির কাজ এগয়নি।