বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজনৈতিক মহল উত্তর মালদহে তৃণমূলের পরাজয়ের বেশকিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তার বেশ কয়েকটি কারণের সঙ্গে একমত মৌসম নিজেও। সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে বামেদের ভোট ব্যাঙ্কে অপ্রত্যাশিত ধস। প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ প্রদত্ত ভোটের মধ্যে মাত্র ৫০ হাজারের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছেন এই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী। সেখানেই তৃণমূলের জয়ের আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে বলে ধারণা জেলার রাজনৈতিক মহলের। বিশ্লেষণকে কার্যত স্বীকার করেছেন মৌসমের ভোট ম্যানেজাররাও।
উত্তর মালদহে হিন্দু ও আদিবাসী অধ্যুষিত বলয় হিসাবে পরিচিত হবিবপুর, বামনগোলা এবং গাজোল ব্লক। এই তিনটি ব্লকেই এক সময় সিপিএমের রাজনৈতিক আধিপত্য ছিল প্রশ্নাতীত। এমনকী পুরাতন মালদহ বিধানসভাতেও দীর্ঘদিন নিরঙ্কুশ দখল ছিল সিপিএমেরই। অন্যদিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল এবং রতুয়ার দুইটি করে ব্লকে কংগ্রেসের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক ছিল।
মালদহের রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তৃণমূল লোকসভা নির্বাচনে জয়ের সহজ অঙ্ক কষেছিল। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা ছিল, পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, বামনগোলা ও হবিবপুরে নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখবে সিপিএম। ফলে বিজেপির কিছুটা হাওয়া থাকলেও সিপিএমের দৌলতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না তাদের। অন্যদিকে এই লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বলয়ে পর্যাপ্ত ভোট তৃণমূল পাবে।
কিন্তু সেই অঙ্ক মেলেনি। মালদহের রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম উত্তর মালদহে ভোট পেয়েছিল ২৭.৭৭ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে সিপিএমের ভোট নেমে এসেছে মাত্র ০৩.৭২ শতাংশে। সিপিএমের খোয়ানো প্রায় ২৪ শতাংশ ভোটের বেশির ভাগটাই বিজেপির ঝুলিতে জমা পড়াতেই কিস্তিমাৎ করেছেন এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু।
এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত তৃণমূল শিবিরও। মৌসম নুরের অন্যতম ভোট ম্যানেজার হেমন্ত শর্মা বলেন, সিপিএম নিজেদের ভোট ধরে রাখতে না পারাতেই তৃণমূলের সর্বনাশ হয়েছে। সিপিএম উত্তর মালদহে দ্বৈত ভূমিকা পালন করেছে। পরাজয় নিশ্চিত বুঝে সংখ্যালঘু অধুষিত এলাকাগুলিতে সিপিএম, কংগ্রেসকে ভোট দিতে বলেছে। অন্যদিকে পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, বামনগোলা এবং গাজোলে সিপিএমের পুরনো নেতা কর্মীরা বিজেপির হয়ে ভোট করিয়েছে।
মৌসম নুর বলেন, ২০১৪ সালে উত্তর মালদহে প্রায় তিন লক্ষ ২৩ হাজার ভোট পেয়েছিল সিপিএম। এবার পেয়েছে মাত্র ৫০ হাজার। সিপিএমের ভোটের বেশির ভাগটাই তৃণমূলে গিয়েছে। সিপিএম গত ভোটের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ এক লক্ষ ভোট পেলেই হেরে যেত বিজেপি। সিপিএমের ভোট ব্যাঙ্কের এই অভাবনীয় ক্ষয় আমাদের ক্ষতি করেছে।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, সিপিএম নিজেদের এই ভোট ব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধার করতে না পারলে আগামী নির্বাচনগুলিতেও বিজেপি’র লাভের ঝুলি বাড়বে বই কমবে না।