বিএনএ,শিলিগুড়ি: আজ, বৃহস্পতিবার লোকসভার সঙ্গে দার্জিলিং বিধানসভা উপনির্বাচনেরও ভোট গণনা। দার্জিলিংয়ের এই জোড়া ফলের দিকে বিশেষ নজর সব দলের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশের ধারণা, লোকসভার সঙ্গে দার্জিলিং বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলের উপর নির্ভর করছে পাহাড়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। সেই সঙ্গে পাহাড়ের রাজনীতিতে বিনয় তামাং ও বিমল গুরুংয়ের ভবিষ্যতও নির্ধারণ হয়ে যাবে। পাশাপাশি জিএনএলএফ পাহাড়ের প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে পারে কি না তাও বিধানসভা ভোটের ফলের উপর নির্ভর করছে।
পাহাড়ের পাশাপাশি দার্জিলিং লোকসভা আসনের ফলের উপর সমতলের রাজনীতিরও অনেক সমীকরণ জড়িয়ে রয়েছে। এই লোকসভা আসনের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের চারটি রয়েছে সমতলে। শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া-খড়িবাড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি ও চোপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকার উপর সমতলে আগামীতে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম কোন জায়গায় থাকবে তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। এক বছরের মধ্যে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ও পুরসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই জায়গা থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ও পুরসভার ভোটে এই চারটি দলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কারণ বিগত কয়েক দশক ধরে এই আসনের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে পাহাড়ের ভোটে। কখনও সুবাস ঘিসিং, কখনও বিমল গুরুংয়ের হুইপে পাহাড়বাসী যাকে সমর্থন করেছেন এই কেন্দ্রে তিনিই জিতেছেন। গত দু’বার অবিভক্ত মোর্চার সমর্থনে এই কেন্দ্রে বিজেপি জিতে এসেছে। কিন্তু এবার পাহাড়ে এক তরফা ভোট হয়নি। মোর্চার বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের ভোটও দু’টি ভাগে ভাগ হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। দার্জিলিংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় তামাংপন্থী মোর্চার নেতা অমর সিং রাইকে প্রার্থী করে তৃণমূল চেয়েছে পাহাড়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে। চাপের মুখে পড়ে বিজেপি তাদের গতবারের জয়ী প্রার্থী কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে এবার এই কেন্দ্র প্রার্থী করেনি। সেখানে বিমল গুরুংপন্থী মোর্চা, জিএনএলএফ ও পাহাড়ের অন্যান্য দলের সমর্থন নিয়ে বিজেপি মণিপুরের বাসিন্দা রাজু বিস্তকে প্রার্থী করেছে। দার্জিলিং লোকসভা আসনে মোট ১৬ জন প্রার্থী থাকলেও তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যেই মূল লড়াই হচ্ছে।
এদিকে দার্জিলিং বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের সমর্থনে বিনয় তামাং প্রার্থী হয়েছেন। আর জিএনএলএফ নেতা নীরজ জিম্বাকে নিজেদের প্রার্থী করেছে বিজেপি। যদিও ভোট গণনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে তৃণমূলের অমর সিং রাই ও বিজেপি’র রাজু বিস্তের মতো সিপিএমের সমন পাঠক, কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকাররাও নিজেদের জয়ের ব্যাপারে সমান আশাবাদী বলে দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, আমিই জিতছি।
লোকসভা আসনে বিজেপি জিতলে পাহাড়ে বিনয় তামাংয়ের সঙ্গে তৃণমূলও অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়বে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের। বিধানসভা উপনির্বাচনেও যদি বিজেপি জেতে তাহলে পাহাড়ের রাজনীতিতে বিনয় তামাং এবং তৃণমূলের চাপ বাড়বে। সেইসঙ্গে পাহাড়ের রাজনীতিতে বিমল গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তনের দরজাও খুলে যেতে পারে বলে তাদের ধারণা। সেক্ষেত্রে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই উপনির্বাচনে বিনয় তামাংয়ের জয় জরুরি বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিনয় তামাং এদিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, উপনির্বাচনে আমি যেমন জিতব, সেরকম লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থী অমর সিং রাই জিতবেন। কেননা পাহাড়ের মানুষ এখন শুধুই উন্নয়ন চান।