সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: এবার মাধ্যমিকের সম্ভাব্য মেধাতালিকায় ৫১ জন স্থান পেলেও দার্জিলিং জেলা তথা শিলিগুড়ির কোনও ছাত্রছাত্রী স্থান পেল না। এতে কিছুটা হলেও হতাশ শিলিগুড়ির শিক্ষামহল। শিক্ষামহলের একাংশের দাবি,ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলির সঙ্গে বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলি পেরে উঠছে না। তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বাংলা মাধ্যমের হাল ফেরাতে এখনই শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার দার্জিলিং জেলায় মোট ১৭ হাজার ৫৭৫ জন ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। তারমধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৮০৬৯ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ৯৫০৬ জন। তবে এবার পাশের হার ৮১ শতাংশ। গত বারও মাধ্যমিক পরীক্ষায় দার্জিলিং জেলা থেকে কেউ মেধাতালিকায় স্থান পায়নি। এবারে তারই পুনরাবৃত্তি হওয়ায় জেলায় উল্লেখযোগ্য ফল হয়নি। তবে মাত্র এক নম্বরের জন্য জেলার দুই ছাত্রী ঊর্যস্বী পাল ও সপ্তদীপা হালদার মেধাতালিকায় স্থান পায়নি। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮০। এতে জেলার শিক্ষামহল আশাহত হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক (উত্তরবঙ্গ) রাম ছেত্রি বলেন, মূলত ইংরেজি মাধ্যমের জন্যই বাংলা মাধ্যমের মান ক্রমেই তলানিতে পৌঁছচ্ছে। কারণ বর্তমানে শিলিগুড়ি শহর ও শহরতলিতে একাধিক ইংরেজি মাধ্যমের বড় মাপের স্কুল গড়ে উঠেছে। ফলে অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে সিংহভাগ মেধাবী পড়ুয়াই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করছে। ফলে সেখানে ভালো ফল হচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমেই মান পড়ছে বাংলা মাধ্যমের। সেক্ষেত্রে অবশ্য রাজ্য শিক্ষা দপ্তর বিশেষ উদ্যোগী হচ্ছে। আশা করি আগামীতে ভালো ফল হবে। শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মাত্র এক নম্বরের জন্য মেধা কমেছে সেটা বলা যায় না। তবে এটা ঠিক যে এবারও আমরা অল্পের জন্য মেধাতালিকায় স্থান পেলাম না। এতে খুবই আক্ষেপ হচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি অভিভাবকদের ঝোঁক বেড়ে চলাটাই এর মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে হাইটেক যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার কুপ্রভাবও পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ুয়ারা পড়াশুনার জগৎ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একইভাবে বাণীমন্দির রেলওয়ে হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ পিটার সেলস্টাইন খালকো বলেন, বর্তমান সময়ে ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি পড়ুয়া সহ অভিভাবকদের ঝোঁক বেশি। স্বাভাবিক কারণেই ভালো মেধার অনেক ছাত্রছাত্রী ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি ঝুঁকছে। তার উপর বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কুপ্রভাব যথেষ্টই। এবিষয়ে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর সহ জেলা প্রশাসনের একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। অন্যাথায় আগামীতে ফলাফল আরও নীচে পৌঁছে যাবে।
উল্লেখযোগ্য ফলাফল না হওয়ায় শিক্ষা মহল ইংরেজি মাধ্যম সহ সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করলেও পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, মেধাতালিকায় স্থান না পেলেও জেলার ফলাফল খুব একটা খারাপ হয়নি। সব মিলিয়ে ফল ভালোই হয়েছে। যারা মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে তাদেরও যেমন অভিনন্দন জানাচ্ছি তেমনই জেলার সেরাদেরও আমার তরফে অভিনন্দন রইল। আশা করছি আগামীতে তারা আরও ভালো ফল করবে।