সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার পর শিলিগুড়ি শহরে থাকা মনীষীদের মূর্তিগুলি রক্ষায় বাড়তি নিরাপত্তায় উদ্যোগী হচ্ছে বাম পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরসভা। মূর্তিগুলি রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি সেগুলির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে অস্থায়ী কর্মীও নিযুক্ত করার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে। ভোট প্রক্রিয়া শেষ হলেই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পুর কর্তৃপক্ষ। যদিও তার আগেই প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরকর্তারা। শিলিগুড়ি পুরসভার শিক্ষা বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য শঙ্কর ঘোষ বলেন, ভোটপর্ব শেষ হলে আমরা মনীষীদের মূর্তি সংরক্ষণের বিষয়ে একটা জরুরি বৈঠক করব। মূর্তিগুলি বছরভর দেখভালের জন্য প্রয়োজনে অস্থায়ীভাবে লোক নিযুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া আমরা স্থানীয়দেরও সাহায্য নেব। অন্যদিকে যে মূর্তিগুলি ঘেরাটোপের বাইরে আছে সেগুলি যাতে সুরক্ষিত থাকে তার চেষ্টাও করা হবে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূল কংগ্রেসের রঞ্জন সরকার বলেন, শহর জুড়ে যেসব মনীষীদের মূর্তি রয়েছে তার একটা অংশ পুরসভার দায়িত্বে। তবে আমরা লক্ষ্য করছি সেই মূর্তিগুলি রক্ষণাবেক্ষণে কোনও উদ্যোগ নেই। শুধুমাত্র বছরের নির্দিষ্ট দিনে মূর্তিগুলি পরিষ্কার করা হয়। বাকি দিনগুলিতে অবহেলায় পড়ে থাকে। পুরসভা অনেক কিছুই বলে। বাস্তবে কিছুই করে না। এবারেও নানা কথা বলছে শুনেছি। তবে কতটা কাজ করবে তা নিয়ে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে পুরবোর্ড চাইলেই লোকবল বাড়াতে পারে। তা সে স্থায়ী হোক আর অস্থায়ী। তবে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বিজেপি কাউন্সিলার খুসবু মিত্তাল বলেন, কোনও ঘটনা ঘটার পর হুঁশ ফেরার চেয়ে আগেই হুঁশ ফেরা ভালো। আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখছি মূর্তিগুলি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এটা দেখতে খুবই খারাপ লাগে। এক্ষেত্রে পুরসভার উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। আমার মনে হয় এবারেও কিছু হবে না।
কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পরেই তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির কাদা ছোঁড়াছুড়ি। এই অবস্থায় শিলিগুড়ি পুর এলাকায় মূর্তিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় কমপক্ষে ১৭ জন মনীষীর মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও একাধিক মনীষীর মূর্তি রয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। যেগুলি বেসরকারি উদ্যোগে বসানো হয়েছে। যদিও বর্তমানে সেসব মূর্তি অবহেলার শিকার। শহরের উল্লেখযোগ্য মূর্তিগুলি হল বাঘাযতীন পার্কে থাকা রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, সুভাষপল্লিতে নেতাজির মূর্তি, দার্জিলিং মোড়ে ক্ষুদিরামের মূর্তি, জলপাইমোড়ে থাকা বিনয় বাদল দীনেশের মূর্তি। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মনীষীদের মূর্তি খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। কোথাও মনীষীদের মূর্তির মুখ ঢেকেছে পাখির মলে, তো কোথাও আবার ধুলো ময়লায়। শহরের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক তথা লেখক গৌরী শঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, সমাজ সভ্যতা যে চূড়ান্ত অবক্ষয়ের পথে হাঁটছে তার প্রমাণ বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে যে মনীষীদের মূর্তির প্রতি এখন কেউই শ্রদ্ধাশীল নয়। এক্ষেত্রে পুরসভার উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। পুরসভা পদক্ষেপ করলে ভালো।