গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
রাজনৈতিক মহল বলছে, সেই ১৯৫৭ সালে সুজাপুরের মাটি থেকে বিধানসভায় জিতে উত্থান হয়েছিল ভারতীয় রাজনীতির এক তারকার। অবিসংবাদিত হয়ে ওঠা সেই বরকত সাহেব প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু রেখে গিয়েছেন অভেদ্য দুর্গ কোতোয়ালি ভবন। সময়ের সরণী ধরে কংক্রিটের কোতোয়ালির গায়েও লেগেছে কালের ছাপ, তৈরি হয়েছে একাধিক দরজা। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ফের একবার প্রমাণ হয়ে গেল মূল ইমারত এখনও জেলা রাজনীতির নিয়ন্ত্রক।
বোন সম্পর্কে মন্তব্যে সচেতন কিন্তু কোতোয়ালির কর্তৃত্ব প্রসঙ্গে অকপট এবারেই প্রথম লোকসভা প্রার্থী হওয়া ইশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, জেলা রাজনীতিতে কোতোয়ালির বিশিষ্ট অবদান আছে। জেলার উন্নয়নে বরকত গনিখান চৌধুরী একটি মাইলফলক হয়ে আছেন। সেই কোতায়ালি বাড়ির ঐতিহ্য রাজনীতির ময়দানে মূল্যবান হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই কারণেই বিরোধী দলগুলিও কোতোয়ালি পরিবারকে ব্যবহার করতে প্রতিবার ভোট এলেই তৎপর হয়ে পড়ে। কোতায়ালি ভবনের ঐতিহ্য প্রসঙ্গে ‘ভাইয়া’র কথার সঙ্গে একমত হলেও প্রয়াত গনিখান চৌধুরীর আদর্শ প্রসঙ্গে নিজস্ব মত আছে মৌসম নুরের। তিনি বলেন, প্রয়াত বরকত সাহেব জেলায় একটি সামাজিক মূল্যবোধের দৃঢ় বুনিয়াদ তৈরি করে গিয়েছিলেন। তা হল সমন্বয়, সৌভ্রাতৃত্বের। সেখান থেকেই কোতোয়ালি বাড়ি জেলার মানুষের কাছে বিশেষ স্থান অর্জন করেছে। আজ, বিজেপি’র আক্রমণে সেই মূল্যবোধই বিপন্ন। বিপন্ন জেলাবাসী। সেই মূল্যবোধকে রক্ষাই আমার কাছে কোতোয়ালি তথা বরকত সাহেবের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য বলে হয়েছে।
কোতোয়ালি বলে যা মালদহে পরিচিত তার আসল নাম কোতোয়ালির মতোই দাপুটে। প্রয়াত বরকত গনিখান চৌধুরীর কারণে দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠা কোতোয়ালিভবন শাহ জালালপুর মৌজা নামে সরকারি খাতায় পরিচিত। ১৯৫৭ সালে শাহ জালালপুরের পৈতৃক জমিদারি থেকে বেরিয়ে সুজাপুরের বিধানসভা ভোট ময়দানে নেমেছিলেন চৌধুরীবাড়ির মেজ ‘শাহ’। তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। সুজাপুর তো বটেই তদানীন্তন মালদহ লোকসভা কেন্দ্রে যেবার ১৯৮০ সালে বরকত গনিখান চৌধুরী ভোটে দাঁড়ালেন, আর অপরাজেয় হয়েই থেকে গেলেন। কারণ, তারপর সাত সাতটি লোকসভা ভোটে জিতলেন। ২০০৬ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালীনই তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু ততদিনে মিথ হয়ে গিয়েছেন বরকত গনিখান চৌধুরী, জেলার অবিসংবাদিত ভোট ক্যাচার। যাঁর নামের স্পর্শ থাকা মানেই নিশ্চিত জয়ের হাতছানি। দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওই ব্যক্তিত্বের কারণেই জেলা তো বটেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতেও ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে কোতোয়ালিভবন।
সামান্য ভিন্ন ঘরাণার কিন্তু সামনের দিকে খিলান তোলা সাদামাঠা একটি বাড়ি। চিলতে পোর্টিকো পেরিয়ে ঠিক সামনেই সেই মর্মর চাতাল। যেখানে বসে একদা মালদহের অবিসংবাদিত কর্তা চেয়ারে ভারী শরীর এলিয়ে দিয়ে আমজনতার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের নিদান দিতেন। কিন্তু তার কী মহিমা জানে রাজনৈতিক মহল। তাই ২০১৯ সালে, তাঁর মৃত্যুর ১৩ বছর পরেও প্রাসঙ্গিক কোতোয়ালি ভবন। তাই জেলার দু’টি লোকসভা আসনে প্রথম সারির দুই দলের চারজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই কোতোয়ালিভবনের বাসিন্দা। কালের দাপটে ভবনের বাসিন্দাদের পথ পৃথক হয়েছে, দরজা বেড়েছে। কিন্তু ভোটবাজারে এখনও স্বনামধন্য কোতোয়ালি।