সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: বুধবার পূর্ব রেলের কাটিহার ডিভিশনের সামসি-ভালুকা স্টেশনের মাঝে ডাউন মালদহ কোর্ট-শিলিগুড়ি ডেমু ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্টেশনে রাতভর দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। ঘটনার জেরে একাধিক দূরপাল্লার এক্সপ্রেস, সুপার ফাস্ট ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ ডাউন লাইন পুরোপুরি বন্ধ থাকায় একাধিক ট্রেনকে আপ লাইন দিয়ে পারাপার করিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে দুর্ভাগ থেকে যাত্রীরা রেহাই পাননি। ডাউন লাইনে ডেমু ট্রেনটির ইঞ্জিন লক হয়ে যাওয়ায় সেটিকে লাইন থেকে সরাতে অনেক সময় লেগে যায়। একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন ২-৩ ঘণ্টা দেরিতে চলে। ইঞ্জিন বিকলের জেরে ওই ডেমু ট্রেনের অনেক যাত্রী রাতেই বাস ধরে গন্তব্যে পৌঁছন। কয়েকজন যাত্রী ট্রেনেই রাত কাটাতে বাধ্য হন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত যাত্রীদের এই দুর্ভোগ চলতে থাকে। রাতেই ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থলে গিয়ে ইঞ্জিন মেরামতের কাজ শুরু করলেও ডেমুর বিকল ইঞ্জিন সারাতে ভোর ৬টা বেজে যায়। সাড়ে ৭টা নাগাদ ডাউন লাইনে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। মালদহ কোর্ট স্টেশন থেকে এদিন শিলিগুড়িগামী ডেমু ট্রেন যেটি ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল সেটি এদিন বাতিল করা হয়। আজ শুক্রবারও মালদহ কোর্ট স্টেশন থেকে ডেমু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
এবিষয়ে উত্তর পূর্ব রেলের কাটিহারের ডিআরএম চন্দ্রপ্রকাশ গুপ্তা বলেন, ভালুকা-সামসি স্টেশনের মাঝামাঝি ডাউন লাইনে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় রেল পরিষেবা স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হয়েছে। কী কারণে ইঞ্জিন বিকল হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মালদহ কোর্ট স্টেশনের ম্যানেজার প্রদীপ কুমার রায় বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত ডেমু ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শিলিগুড়ি-মালদহ কোর্ট ডেমু ট্রেনটির ইঞ্জিন ভালুকা এবং সামসি স্টেশনের মাঝামাঝি ডাউন লাইনে লক হয়ে যায়। এর জেরে রাত থেকেই মালদহের বিভিন্ন স্টেশনে আপ ও ডাউন ট্রেনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মালদহ টাউন স্টেশনে আপ সরাইঘাট এক্সপ্রেস প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ডাউন তিস্তা-তোর্সা চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও কামরূপ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা, রাধিকাপুর এক্সপ্রেস, আপ পদাতিক এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেন ২-৪ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করেছে। ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসকে প্রায় এক ঘণ্টা গৌড় মালদহ স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। জমিরঘাটা স্টেশনে আপ দার্জিলিং মেল ৩ টা ৪৮ মিনিট থেকে ৪ টা ৩০ মিনিট এবং একই ট্রেন মালদহ স্টেশনে ৬টা ১৬ মিনিট থেকে ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। রাতে ট্রেনগুলি এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন পার হতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নিয়ে নেয়। একাধিক ট্রেন দেরিতে চলায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। অনেকেই বিভিন্ন স্টেশনে বসে কাটিয়েছেন। দূরপাল্লার যাত্রী ছাড়া আশেপাশের যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে বাস ধরে নিজের গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছেন। এদিন সকালে মালদহ কোর্ট থেকে শিলিগুড়ি গামী ডেমু ট্রেন বাতিল হওয়ায় অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। অনেক সরকারি কর্মী, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ট্রেন না পেয়ে বাস, ছোট গাড়িতে গন্তব্য স্থলের উদ্দেশে রওনা হন। আজ শুক্রবার মালদহ কোর্ট থেকে ডেমু ট্রেন বাতিল থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এই ট্রেনটি কবে থেকে স্বাভাবিকভাবে যাত্রা শুরু করবে তা রেল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।
দুর্ভোগের জেরে বৃহস্পতিবার ভোরে মালদহ স্টেশনে যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা বলেন, সকাল থেকে একাধিক ট্রেন লেটে চলছে। দীর্ঘক্ষণ স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কখন ট্রেন আসবে কিছুই বুঝতে পারছি না। বালুরঘাট শহরের বাসিন্দা অজয় দত্ত বলেন, গৌড় লিংক আপ মালদহ টাউন স্টেশনে এসে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে। আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে স্টেশনে আটকে রয়েছি। কখন বাড়ি পৌঁছব জানি না।