বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্যে ফলপ্রকাশ স্থগিত করে দেওয়া হয়নি। ফলাফলে তেমন জোরালো ত্রুটি যে ছিল না তা কর্তৃপক্ষ জানত। কিন্তু সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারদের স্থায়ীকরণের একটি পর্ব চলছিল। ছাত্রবিক্ষোভ হলে সেই কাজ আটকে যেতে পারে আশঙ্কাতেই কর্তৃপক্ষ ছাত্রদরদী সেজে ফলাফল স্থগিত করে দেয়। সম্প্রতি স্থায়ীকরণ পর্ব মিটে যাওয়ার পরই ফলাফল প্রকাশিত হল। এবং প্রত্যাশিতভাবেই তাতে আকাশ-পাতাল কোনও তফাৎ হয়নি। ফলাফলে গড়ে এক শতাংশের পরিবর্তন ছাত্রছাত্রীদের রিভিউ পর্বেই হয়ে যেতে পারত। আরও একটি বিষয় ফলাফল প্রকাশের পর উঠে এসেছে যে, কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের মুখ্য বিষয়গুলিতে ফলাফলে কোনও পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তনের সিংহভাগই মূলত আরবি, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ও এডুকেশন বিষয়ে এসেছে।
ফলাফল স্থগিত নিয়ে বিতর্ক এড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ামক দেখেন। তিনিই যা বলার বলতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক শ্যামাপদ মণ্ডল অবশ্য পরিষ্কার বলছেন, খুব বেশি পরিবর্তন ফলাফলে আসেনি তার কারণ লিখিত পরীক্ষার ফলাফল যাচাইতে কোনও ত্রুটি ছিল না। সামান্য কিছু ত্রুটি ওএমআর কাগজে এমসিকিউ পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়েছিল। সেই বিষয়টি সংশোধন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্তরে ফলাফল যাচাই করতে হয়েছে বলে সময় লেগেছে।
পরিবর্তিত ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রসূন রায়। তিনি বলেন, আহামরি কিছু পরিবর্তন ফলাফলে হয়নি। তাহলে দেড় মাস অপেক্ষার কী প্রয়োজন ছিল? তাহলে কি সত্যিই অফিসারদের স্থায়ীকরণ পর্বে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তারজন্যেই ছাত্রদরদী সেজেছিল বিশ্ববিদ্যালয়? কলেজগুলি থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসছে আমরা নজর রাখছি। তারপরেই এনিয়ে যা করার করব। আমরা হতাশ। পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, আমরা শুরু থেকে বলেছিলাম ফলাফল প্রকাশে কোনও ত্রুটি ছিল না। যে সামান্য ত্রুটি ছিল তা যান্ত্রিক ত্রুটি। সেটা প্রতিবারই থাকে। পুনর্মূল্যায়ণের মাধ্যমে তা শুধরে নেওয়া যায়। তড়িঘড়ি আমাদের কাজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে ফলাফল স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না।
এবছরের ৩ জানুয়ারি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় একইসঙ্গে পার্ট-১ ও পার্ট-২ অনার্সের ফলপ্রকাশ করে। সেই ফলাফলে দেখা যায়, পার্ট-১ এ ৫১.৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছেন। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৬৭.৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে, পার্ট-২ তে ৮০.৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছেন। যা ২০১৭ সালে ছিল, ৮৪.৯৮ শতাংশ। ফলাফলের এই বিপুল তফাত এবং বিষয়ভিত্তিক অনেকগুলি ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীরা রাতারাতি বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ফলাফল ‘স্থগিত’ করে দেয়। তারপর পুনর্বিবেচনার জন্যে দেড় মাস সময় অতিবাহিত করে বৃহস্পতিবার ফলপ্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, পার্ট-১ এ পাশের হার ২.৫৭ শতাংশ আর পার্ট-২ তে ১.০৯ শতাংশ বেড়ছে। এই সামান্য পরিবর্তনের জন্যে এত সময় ব্যয় করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে দু’টি বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঝুলিয়ে রাখা নিয়েও। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এনিয়ে কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।