কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
মাদকের স্বর্গরাজ্য মেক্সিকো। এটা দেশটির ‘সহজাত উপাধি। ১৯৩৩ সালের গোড়া থেকে আফিম-অর্থনীতি নির্ভর মেক্সিকোতে মাদকের ব্যবসা শুরু। মাত্র ৩০ বছরের মধ্যেই ব্যবসার রমরমা। একাধিক মাদক চক্রের অভ্যুত্থান। তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে খুন-খারাপি, হিংসা। সংঘর্ষে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন কেউ না কেউ। রাস্তার পাশে বস্তাভর্তি গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনা মেক্সিকোয় এখন গা সওয়া। দেশের পুরো অর্থনীতিটাকেই নিয়ন্ত্রণ করে মাদক কারবারিরা। অভিযোগ, মাদক চক্র নিয়ন্ত্রণে সরকারও ঠুঁটো জগন্নাথ। প্রতি বৎসর দেশটিতে পাইকারি বাজারে মাদক বিক্রির মাধ্যমে এক হাজার ৩৬০ কোটি ডলার থেকে ৪ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার আয় হয় বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবেশী আমেরিকা মাদক কারবারিদের কাছ মাদক কিনছে। তবে আমেরিকা বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও এল চ্যাপোকে পাকড়াও করার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনের তৎপরতা কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে এল চ্যাপোকে গ্রেপ্তারের পর যতই স্বস্তির শ্বাস ফেলুক তামাম দুনিয়া, মেক্সিকো রয়েছে মেক্সিকোতেই। মাদক কারবারের অতল গহ্বর থেকে উঠে দেশটির পক্ষে কার্যত অসম্ভব। এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই কোনও বিশেষজ্ঞের। দেশের মধ্যে মাদকের ব্যবসা বাধাহীনভাবে এগিয়ে চলেছে, চলবেও। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ম করে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। অনেকেই মনে করেন, সেটা লোক দেখানো। মাদক চক্রের সঙ্গে সরকারি কর্তাদের ‘অশুভ-আঁতাতে’র বিষয়টিও সর্বজনবিদিত। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণে সুফল মিলছে না। তাই হেরোইন, কোকেন, ব্রাউন সুগার, মারিজুয়ানা সবকিছুরই অবাধ ব্যবসা দেশটির শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে গিয়েছে।
এছাড়াও মেক্সিকোতে এখন মুখোশধারী মাদক চক্রের রমারমাও বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ। এইসব চক্রের সঙ্গে সরকারের তাবড় কর্তারা জড়িয়ে বলে অভিযোগ। তারাও মাঝে মধ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গোপনে কার্টেল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। যা মেক্সিকোর মাদক সাম্রাজ্যে টিকে থাকার লড়াই। সেই লড়াই হচ্ছে কখনও নিজেদের সঙ্গে। আবার কখনও প্রতিপক্ষের সঙ্গে। ফলে খুন, লুটতরাজ রাহাজানি, অপহরণ মাদক কারবারিদের পেশা হয়ে গিয়েছে। বেপরোয়া এই মাদকচক্রের কাছে এখন ন্যায়-অন্যায়ের কোনও ফারাকই নেই।
মেক্সিকোতে এইসব মাদক কারবারি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এই প্রবণতা মূলত দেখা যায় এল চ্যাপোদের মতো যারা ঢাক পিটিয়ে মাদক কারবার করে থাকে। তারা এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে অনেক সময় সরকারি বাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বলা যেতে পারে, মাদক কারবারিদের টার্গেট শুধুমাত্র তাদের প্রতিপক্ষই নয়, নিরাপত্তা বাহিনীও। তা হলেও এই অসাধু মাদক চক্রগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালায় সরকার। তাতে দু’একদিন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কিছুদিনের মধ্যে তা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এল চ্যাপোর গ্রেপ্তারও সেই ধারাবাহিক অভিযানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে মেক্সিকোর মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী সমাধান নয়। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
বর্তমানে মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার মধ্যে মেক্সিকোর সিনোলোয়া এবং গালফ কার্টেল-এ দুই চক্র কোকেন ব্যবসায় সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে আছে। এ দুই চক্রের মাধ্যমে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোকেন পাচার হচ্ছে। যাকে ঘিরে রয়েছে বিশাল অঙ্কের আর্থিক কারবার। গুজম্যান ওরফে এল চ্যাপো জেলবন্দি হলেও সেই কারবার রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়। মেক্সিকোর মাদক সাম্রাজ্য চলবে তার স্বাভাবিক নিয়মেই। এল চ্যাপোর সিংহাসন দখলে অপেক্ষা করছে অন্য কেউ। কারণ, মেক্সিকোর মাদক সাম্রাজের উত্থান-পতনের ইতিহাস বলছে, ‘সম্রাটের সিংহাসন’ খালি থাকে না। তা ছাড়া এল চ্যাপেলও যে যাবজ্জীবনের সাজা খেটে জেলে পচে মরবে, এমন নিশ্চয়তাই বা কোথায়? অপরাধ দুনিয়ায় জেলছুট হওয়ার ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ও খুব একটা মন্দ নয়! ফাইল চিত্র