বিজ্ঞানের জগতের নিয়ন্ত্রণ এখন পর্যন্ত পুরুষের কবজায়। সেই ১৯০৩ সালে যখন মেরি কুরি বিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান, তারপর মেঘে মেঘে বহু বেলা গড়িয়েছে। মেরি কুরির পরে রসায়ন, পদার্থ ও চিকিৎসা শাস্ত্রে ছয়শো পুরুষ নোবেল বাগিয়ে নিতে পারলেও, মহিলাদের সংখ্যা মাত্র ১৯টি। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের জগতে মহিলাদের এই অসম উপস্থিতি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও মুক্ত নয়। বাকি বিশ্বের তুলনায় ইউরোপের মহিলারা কিছুটা বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়। অথচ, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইউরোপে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে মাত্র একজন মহিলা। জার্মানি ও ফিনল্যান্ডের চিত্র আরও খারাপ। সেখানে এই পেশায় প্রতি তিনজনে মাত্র একজন মহিলার খোঁজ মেলে। তবে এর উল্টো চিত্রও রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর গবেষণাগারে পুরুষ, মহিলার উপস্থিতি সমান, কিছু ক্ষেত্রে বেশি। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, লাটভিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ মহিলা। কাছাকাছি অবস্থা বুলগেরিয়ায়। সেখানে এই পেশায় থাকা জনবলের মধ্যে ৫২ শতাংশ মহিলা। গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশে মহিলা-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে পোল্যান্ড ও সার্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে এগিয়ে। ইকোনমিস্ট বলছে, এসব অঞ্চল এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোভিয়েত শাসকরা সেই সময় পরীক্ষাগারে মহিলাদের সমান উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কঠোর নীতি নিয়েছিলেন। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও বিজ্ঞানে আগ্রহী করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের অন্য পেশায় যাওয়ার সুযোগও রাখা হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকলেও পরীক্ষাগারে মহিলাদের উপস্থিতির অভ্যাস এখনও রয়ে গিয়েছে। তবে বিজ্ঞানী হিসেবে মহিলাদের কম উপস্থিতির কারণ আরও আছে। মহিলা অধিকার কর্মীরা বলছেন, মহিলারা যতই ওপরের শ্রেণিতে ওঠে, ততই বিজ্ঞানের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। বিশেষ করে কলেজ শেষ হওয়ার পরে এসব বিষয়ের সঙ্গে অধিকাংশ মহিলা শিক্ষার্থীর সম্পর্ক একেবারে মুছে যায়।
ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি অনুযায়ী, যদি বিজ্ঞানভিত্তিক পেশায় মহিলা-পুরুষের সমান উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলের জিডিপি অন্তত ৩ শতাংশ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে ১২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। গত দশক জুড়ে অন্য যে কোনও পেশার তুলনায় ইউরোপের প্রযুক্তি খাতে চার গুণ বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের ধারণা, ওই অঞ্চলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে পাঁচ লাখ দক্ষ লোকের অভাব থাকায় ২০২০ সালের মধ্যে সেখানকার সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।