গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামে একটি সম্মেলনে প্রথম একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখতে এবং ক্রমান্বয়ে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমডি)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে যদি বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, তারপরও ২১০০ সাল নাগাদ হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের ৩৬ শতাংশ হিমবাহ গলে যাবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে গলে যাবে ৫০ শতাংশ হিমবাহ। আর যদি কার্বন নিঃসরণ না কমে, তবে ক্ষতির পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশে গিয়ে ঠেকতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমডি)-এর গবেষক ফিলিপাস ওয়েস্টার জানিয়েছেন, ‘এটা এমন ধরনের জলবায়ু সঙ্কট, যার কথা আপনারা ভাবতেও পারছেন না।’
আফগানিস্তান থেকে শুরু করে মায়ানমার পর্যন্ত হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চল অবস্থিত। একে বিশ্বের ‘তৃতীয় মেরু’ হিসেবে ডাকা হয়। কারণ, আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকার পর এই অঞ্চলটিই সবচেয়ে বেশি বরফে আচ্ছাদিত। হিমবাহগুলো হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলে বসবাসকারী ২৫ কোটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জল সংরক্ষণাগার হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া পাকিস্তান, চীন ও অন্যান্য দেশের চূড়া থেকে প্রবাহিত হওয়া বড় বড় নদীগুলোর উপর ১৬৫ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। আইসিআইএমডি’র গবেষক ফিলিপাস ওয়েস্টার জানান, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ১৯৭০-এর দশক থেকে হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের ১৫ শতাংশ বরফ উধাও হয়ে গিয়েছে। হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলটি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত প্রভাব একেক জায়গায় একেক রকমের। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অংশের কিছু হিমবাহের অবস্থা স্থিতিশীল। এমনকী, এগুলোর কোনওটিতে বরফ জমছে। তবে, ভবিষ্যতে উষ্ণতা বাড়লে এসব হিমবাহও গলতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা করছেন ওয়েস্টার। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা বিশ্বের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট যে পন্থা নির্ধারণ করেছি, যদি তা বাস্তবায়িতও হয়, তবে তারপরও এক তৃতীয়াংশ হিমবাহ হারাব এবং সমস্যার মধ্যে পড়ব। এটাই এই গবেষণার মধ্য দিয়ে পাওয়া ভয়াবহ বিষয়।’
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমা ওয়াধাম বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের হুমকিতে থাকা এই অঞ্চলটিকে প্রাধান্য দিয়ে যুগান্তকারী একটি কাজ হয়েছে। হিমালয়কে ঘিরে থাকা আটটি দেশের অনুরোধে গবেষণাটি করা হয়েছে। ২০০-এরও বেশি বিজ্ঞানী পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। আরও ১২৫জন বিশেষজ্ঞ গবেষকদের কাজ পর্যালোচনা করেছেন। ওয়েস্টার বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের বরফের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি অজানা। তবে, আমরা এখন ভালোভাবেই জানি যে, এই বিপদ মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা জরুরি ভিত্তিতেই নিতে হবে।’ হিমবাহ গলার কারণে ২০৫০ থেকে ২০৬০ সাল পর্যন্ত নদীর প্রবাহ বেড়ে যাবে। এতে হ্রদগুলোর উচ্চতা বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হবে। তবে ২০৬০-এর দশক থেকে নদীর প্রবাহ কমতে শুরু করবে। সিন্ধু ও মধ্য এশিয়ান নদীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদী প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হাইড্রো ড্যামগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। অঞ্চলের বেশিরভাগ বিদ্যুতই এখান থেকে উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়বে কৃষকদের উপর। তারা শস্য উৎপাদন করতে প্রয়োজনীয় জল পাবেন না। গবেষক ওয়েস্টার জানান, এখন বর্ষাকালে অতিরিক্ত বর্ষণ হচ্ছে। আগে ১০০ বছর পর পর যে রকমের বন্যা হতো, তা এখন প্রতি ৫০ বছর পর পরই দেখা যাচ্ছে।