বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
১৯৭২ সালে ভুটানের চতুর্থ রাজা জিগমে সিংইয়ে ওয়াংচুক ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ ভাবনাটির প্রচলন করেছিলেন। ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নতির পথে এগিয়ে চলার পাশাপাশি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন কল্যাণকর বিষয়গুলিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে এই ভাবনা। এদিন রয়্যাল ইউনিভার্সিটির বক্তৃতায় মোদি বলেন, ভুটানের কাছ থেকে বিশ্বের অনেক কিছু শেখার আছে। এখানে উন্নয়নের সামনে পরিবেশ এবং সংস্কৃতি কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং একে অপরকে সহযোগিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে, আমরা যদি প্রশ্ন করি ভুটানের ব্যাপারে আপনি কী জানেন? তাহলে একটাই উত্তর আসবে, গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেসের ভাবনা। আমি এতে অবাক হইনি। ভুটান প্রকৃত সুখের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছে।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘সৌহার্দ্য, একতা ও সহানুভূতির সারমর্ম বুঝেছে ভুটান। গতকাল আমাকে স্বাগত জানাতে পথের দু’ধারে যে শিশুরা দাঁড়িয়েছিল, তাদের চোখে-মুখেও সেই উপলব্ধি ঝরে পড়ছিল। আমি ওদের হাসি কোনওদিন ভুলব না।’
এরপর ভারত ও ভুটানের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রজন্মকে অবগত করতে নয়াদিল্লি ও থিম্পুর নিবিড় নৈকট্যের কথা বলেন মোদি। বিশ্বের আর কোনও প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, ভারত এবং ভুটান হল ‘স্বাভাবিক অংশীদার’। স্বাভাবিক কারণেই দু’দেশের মানুষ একে অপরের প্রতি গভীর টান অনুভব করেন। শুধু ভৌগলিক দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকেও দু’দেশের মানুষের নিবিড় যোগ রয়েছে বলে জানান মোদি। তিনি বলেন, ‘ভারতের মাটিতেই রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ হয়ে উঠেছেন, তার জন্য আমরা ভাগ্যবান। আর এই দেশের মাটি থেকে বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যুগ যুগ ধরে এখানকার বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা দু’দেশের মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করে গিয়েছেন।’
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শিখরে পৌঁছতে ভুটানের যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেন মোদি। ভারতের চন্দ্রযান-২ প্রকল্পের উল্লেখ করে মোদি আশাপ্রকাশ করেন, খুব শীঘ্রই ভুটানেরও নিজস্ব উপগ্রহ মহাকাশে ঘুরবে। পড়ুয়াদের ভোকাল টনিক দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই— এটাই সেরা সময়। এখন সারা বিশ্বজুড়ে অনেক বেশি সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আপনাদের মধ্যে অভাবনীয় কাজ করার প্রতিভা এবং শক্তি রয়েছে। যে কাজ আগামী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করবে। অন্তরের ডাক শোনার চেষ্টা করুন এবং সেটার জন্য মন-প্রাণ সঁপে দিন।’
এদিন রয়্যাল ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ভুটানের বিরোধী দলনেতা পেমা গিয়ামসোর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকও করেন নরেন্দ্র মোদি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার ট্যুইটারে এই খবর জানান। তিনি জানান, ভুটানের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
শনিবার দু’দিনের সফরে ভুটান এসেছিলেন মোদি। দ্বিতীয়বারের প্রধানমন্ত্রিত্বে প্রথমবার হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এনিয়ে দু’বার ভুটানে এলেন মোদি। রবিবার বিকেলে ফের দিল্লির পথে রওনা দেন মোদি। তার আগে দুপুরে রাজার আতিথেয়তায় মধ্যাহ্ণভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।