কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে যে জটিলতা চলছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের উপর চাপ বাড়াতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট হয়েছে ইসলামাবাদ। সেই লক্ষ্যে ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ চীনকে পাশে পেতে শুক্রবার বেজিংয়ে যান পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। বেজিংয়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আশ্বাস আদায় করতে পারেননি তিনি। পাশে দাঁড়ানোর বদলে ভারত ও পাকিস্তান— দুই দেশকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মধ্যে দিয়ে উদ্ভূত জটিলতার সমাধানের জন্য বার্তা দিয়েছে চীন। সেদেশের বিদেশ দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের তরফে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তা নজরে রেখেছে চীন। আমরা চাই, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হোক এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখুক।’
গত ৬ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার বিরোধিতা করে বার্তা দেয় বেজিং। এরপরেই চীনকে পাশে পেতে তৎপর হয় পাকিস্তান। আগামী ১১ আগস্ট চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেদেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি। চীন যাতে কোনওভাবেই জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পাশে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে এদিন সকালেই বেজিং পৌঁছে যান কুরেশি। কিন্তু তাঁর দৌত্য বিফলে যায়। চীনের তরফে জানানো হয়, দ্বিপাক্ষিক এই জটিলতা মেটাতে হবে ভারত ও পাকিস্তানকেই।
জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা খারিজ এবং রাজ্যকে ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা নিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তান। বিষয়টি রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করা হবে বলেও জানায় ইসলামাবাদ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের হস্তক্ষেপের দাবিও তোলা হয়। কিন্তু এদিন সেখানেও বড় ধাক্কা খেল পাকিস্তান। ১৯৭২ সালের ‘সিমলা চুক্তি’র প্রসঙ্গ টেনে জম্মু ও কাশ্মীর জটিলতা সমাধানে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার সম্ভাবনা খারিজ করে দেয় রাষ্ট্রসঙ্ঘ। দু’পক্ষকে সংযত থাকার বার্তা দেওয়া হয়।
এদিকে, কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না বলে জানাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতে থাকা জটিলতা মেটাতে দুই দেশকে নিজেদের মধ্যে সরাসরি কথা বলতেও বার্তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান বদল করছে কি না জানতে চাওয়া হলে সেদেশের বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র মর্গ্যান ওর্তাগুস সাফ ‘না’ বলে দেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি এনিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো, তবে আমি তা কখনই এখানে ঘোষণা করতাম না। কিন্তু কোনও পরিবর্তন হয়নি।’
তিনি আরও জানান, জম্মু ও কাশ্মীর ঘিরে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা মেটাতে ভারত ও পাকিস্তান— দুই দেশই উদ্যোগী হোক। দু’টি রাষ্ট্রই এই ইস্যুতে শান্তি ও সংযম বজায় রাখুক। আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দপ্তরের এক উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিক নয়াদিল্লিতে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
গত সোমবার সংবিধানের ৩৭০ ধারা খারিজ এবং রাজ্যকে ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতের হাই কমিশনারকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। এই সিদ্ধান্তের জেরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরও অবনতি হয়। জটিলতা মেটাতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের দাবিও তোলে ইসলামাবাদ। কিন্তু নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও পক্ষের মধ্যস্থতা মানা হবে না বলে সাফ জানায় ভারত। তারপরেও চীন, রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টাও সফল হল না।