বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
গত পুলওয়ামায় জঙ্গিহানায় প্রাণ হারান প্রায় ৫০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। সেই নাশকতায় পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের যোগ প্রমাণ হতেই দু’দেশের সম্পর্ক সাপে-নেউলে পরিণত হয়। পাকিস্তানকে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয় ভারতের আকাশসীমা। পাক রপ্তানিকৃত পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপায় নয়াদিল্লি। এবং সর্বোপরি বালাকোটে জয়েশের সবথেকে বড় ঘাঁটিতে রাতের অন্ধকারে বিমানহানা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। গুঁড়িয়ে যায় সেই জঙ্গিঘাঁটি। প্রাণ হারায় বহু জঙ্গি। এই পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদীদের মদতদাতা পাকিস্তান চাপে পড়ে যায়। সেনাবাহিনী, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই নিয়ন্ত্রিত সরকারের উপর চাপ বাড়াতে থাকে জয়েশ, লস্কর, জামাত-উদ-দাওয়ার মতো জঙ্গি সংগঠন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এহেন লড়াইয়ে গোটা দুনিয়া যখন ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, তখন নিজেদের পিঠ ও গদি বাঁচাতে ভারতের উপর পাল্টা হানায় কৌশল নেয় ইমরানের প্রশাসন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে অবস্থিত ভারতের বায়ুসেনা ঘাঁটি টার্গেট করে পাক বায়ুসেনা। মার্কিন এফ-১৬ নিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে বোমা ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু, তার থেকে কম শক্তিশালী মিগ-বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে তাড়া করেন ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন। নিখুঁত নিশানায় ধ্বংস করে দেয় যুদ্ধের ‘ট্রাম্প কার্ড’ এফ-১৬-কে। কিন্তু, ভারতের সেই বিমান ভেঙে পড়ে এবং অভিনন্দনকে কব্জা করে। আইন লঙ্ঘন করে তাঁর উপর চলে অকথ্য অত্যাচার। অভিনন্দনকে জেরা করে ভারতের গোপন সামরিক তথ্য বের করার চেষ্টা করে পাকিস্তান। কিন্তু, চা পান করতে করতে অভিনন্দন অত্যন্ত সূচারুভাবে সেই সমস্ত প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। পাকিস্তানের প্রকাশ করা একাধিক ভিডিওতেই তা দেখা গিয়েছে। পরে ভারতের হুঁশিয়ারি এবং আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নথি স্বীকার করে শান্তির বার্তা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বীর সৈনিক অভিনন্দনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
এসব তথ্য সকলেরই জানা। এই পুলওয়ামা কাণ্ডকে কেন্দ্র করে যখন ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ না হওয়ার কথা, তখন সেই অভিনন্দনকে ব্যঙ্গ করে জ্বরে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নামে পাকিস্তান। গত কয়েক বছরের চিরাচরিত ধারা মেনে তৈরি করে বিদ্রুপমূলক ভিডিও। সেদেশে জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে অভিনন্দনকে কেন্দ্রকে বিশ্বের কাছে ভারতকে খাস্তা করতে নামে ইমরানের পাকিস্তান। গত ১৬ জুন রবিবার ছিল ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ। তার আগে ‘ফাদার্স ডে’কে ব্যঙ্গ করে পরিকল্পনামাফিক নকল অভিনন্দনকে নিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপনটি বাজারে ছাড়ে ‘জ্যাজ টিভি’। পাকিস্তানে বিশ্বকাপ সম্প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছে তারাই। ফলে তারা জানে, পাক দর্শক কোন জিনিস খাবে, আর ওয়াঘা সীমান্তের এদিকের লোকেরা চিড়বিড়িয়ে জ্বলবে।
অভিনন্দনকে জেরার সময় পাক সেনা ভিডিও প্রকাশ করেছিল। সেখানে চায়ের কাপ হাতে বসে থাকা উইং কমান্ডারকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে শোনা গিয়েছিল এক ব্যক্তিকে। অধিকাংশ উত্তরেই অভিনন্দনকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘সরি স্যার, এটা আমার বলা উচিত হবে না।’ তখন অভিনন্দনকে অত্যন্ত শান্ত, ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, ক্রিকেট ম্যাচকে সামনে রেখে পাক মিডিয়া যে ৩৩ সেকন্ডের বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল করেছে, সেখানে রয়েছেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের আদলে এক ব্যক্তিকে। অভিনন্দন বর্তমানের মতোই গোঁফ রয়েছে তাঁর। গায়ে ইউনিফর্মের বদলে ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সির রঙের টি-শার্ট।
চা পান করতে থাকা আসল ভিডিওর আদলে বিজ্ঞাপনে অভিনন্দন রূপী ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘টস জিতলে কী করবে’? অভিনন্দনের উক্তি ধার করে এই অভিনেতা বলছেন, ‘দুঃখিত, আমার বলার অনুমতি নেই’ (আই অ্যাম সরি, আই অ্যাম নট সাপোজোড টু টেল ইউ দিস)। এর পরেও প্রশ্ন আসে, প্রথম একাদশ কী হবে? তাতেও একই উত্তর। চা কেমন? উত্তরে অভিনন্দনের কায়দায় এই অভিনেতা বলেন,‘খুব সুন্দর’। এরপর তাঁকে বলা হয়, আপনি যেতে পারেন। যেই অভিনন্দনরূপী অভিনেতা বেরতে যান, তাঁরা কাঁধে হাত দিয়ে আটকানো হয়, ‘এক মিনিট দাঁড়াও, কাপ কোথায় নিয়ে যাচ্ছ’, বলে তাঁর হতে থাকা চায়ের কাপটা নিয়ে নেওয়া হয়। তারপরই স্ক্রিনে ফুটে ওঠে ‘লেটস ব্রিং দ্য কাপ হোম’। অর্থাৎ, দেশে বিশ্বকাপ নিয়ে এসো পাকিস্তান। এছাড়া বিজ্ঞাপনে নীল জার্সি পরিহিত অভিনন্দনকে দেখে ভয়ার্ত মনে হয়েছে। ওই ব্যক্তির গায়ের রং অনেকটা কালো দেখানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপনটি সম্প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের একাংশ বলেছেন, খেলা নিয়ে এই ধরনের বিজ্ঞাপন মোটেই শোভনীয় নয়। পাকিস্তানের মনোভাব বিজ্ঞাপন থেকেই বোঝা যাচ্ছে। অনেকে আবার অনেকে একে ‘অ-সংবেদনশীল’ এবং ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ লিখেছে, আমরা এখনও পাকিস্তানিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছি। নিজেদেরকে বড় করতে তাদেরকে অনেক নীচে নামতে হয়। আর বিশ্বকাপে ভারত কখনো পাকিস্তানের কাছে হারেনি। কেউ আবার লিখেছে, অভিনন্দনকে নিয়ে পাকিস্তান এতোটাই আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে যে, বিশ্বকাপ ট্রফির পরিবর্তে তার খাওয়া চায়ের কাপ নিয়েই সন্তুষ্ট হতে রাজি তারা। আবার কেউ ইমরানের দল পিটিআইয়ের সমালোচনা করে লিখেছে, ইমরান খান আসলে পিটিআইয়ের আসল চরিত্রটিই তুলে ধরেছে। তবে অভিনন্দন আমাদের গর্ব।
পাক মিডিয়ার এই বিজ্ঞাপনের আগে স্টার স্পোর্টস ইন্ডিয়া একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে তৈরি এই বিজ্ঞাপন মনে করিয়ে দেয় ২০১৫ বিশ্বকাপের সময় ভাইরাল হওয়া ‘মওকা মওকা’ বিজ্ঞাপনটিকে। তবে এ বারের বিজ্ঞাপনে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা চরিত্র। এই বিজ্ঞাপনে ভারতকে বাবা, পাকিস্তানকে ছেলে দেখানো হয়। ভাইরাল হওয়া বিজ্ঞাপনের ওই ভিডিয়োতে দেখা যায়, পাকিস্তানের জার্সি পরা ব্যক্তি বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত ব্যক্তিকে তাঁর বাবার বলে যাওয়া কিছু কথা বলে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। ‘বারবার পরাজিত হলেও চেষ্টা ছাড়া উচিত নয়’- বাবার বলে যাওয়া এই ধরনের কথা বলছেন তিনি।
দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে এই ধরনের বিজ্ঞাপনকে খুব অপরিণত বলে সমালোচনা করেছেন সানিয়া মির্জা। ভারতের টেনিস তারকা তথা পাক বধূ লেখেন, ‘ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ নিয়ে এমনিতেই আগ্রহ তুঙ্গে। এই ম্যাচের উন্মাদনা বাড়ানোর জন্য এই ধরনের কুরুচিকর বিজ্ঞাপনের কোনও প্রয়োজন নেই। অথচ সীমান্তের দু’প্রান্তেই তা শুরু হয়েছে।’ সানিয়ার আরও সংযোজন, ‘এটা শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ। তবে কেউ যদি মনে করে, এই ম্যাচটি ক্রিকেটের চেয়েও বেশি কিছু, তাদের জীবনকে নতুন ভাবে দেখা উচিত।’
তবে এখানেই শেষ হয়, বিজ্ঞাপন যুদ্ধ। অভিনন্দনকে হেঁটা করার পাল্টা পাকিস্তানকে কুপোকাত করতে ম্যাচের আগে আরও একটি বিজ্ঞাপন বানায় ভারতীয় সমর্থকেরা। প্রত্যাশা মতোই তা ভাইরাল হয়ে যায়। এই বিজ্ঞাপনের থিম অভিনন্দন বর্তমানের সেই জনপ্রিয় গোঁফ। যেটা এই মুহূর্তে ভারতীয় পৌরুষ আর বীরত্বের স্টাইল স্টেটমেন্ট। বিজ্ঞাপনটি শুরু হচ্ছে, সেলুনের দেওয়ালে টাঙানো টিভিতে সদ্য অবসর নেওয়া যুবরাজ সিংয়ের ছয়ে ছক্কার ভিডিওটা দিয়ে। এক ভারতীয় সমর্থক সেই জোশে মজেছেন। পরনে ভারতীয় দলের চেনা নীল টি-শার্ট। আকণ্ঠ আবেগে ঘোর লাগা গলায় সেলুকর্মীকে বলছেন, ‘কিছু কিছু মানুষকে আমরা কোনওদিন ভুলতে পারব না।’ এমন সময় দরজা খুলে পাশের সিটে এসে বসেন এক পাক সমর্থক।
গায়ে পাকিস্তানি জার্সি। তাকে দেখেই ভারতীয় সমর্থকের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। কিছুটা স্বগত উক্তির ঢঙেই পাক সমর্থক যুবক বললেন, ‘আর কিছু লোককে আমরা ভুলে যেতে চাই।’ সেই পাক সমর্থক হঠাত্ করেই ভারতীয় ক্রিকেটভক্তকে একটি উপহার দিয়ে বলেন, ‘হ্যাপি ফাদার্স ডে আব্বু।’ বাক্স খুলে ভারতীয় সমর্থক দেখেন, তাতে একখানা সাদা রুমাল রাখা। পাক সমর্থক ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘রেখে দাও। কাল ম্যাচে হারলে মুখ লুকোনোর জন্য ওটা কাজে লাগবে।’ ভারতীয় সমর্থক এর পর আর সেই পাকিস্তানি সমর্থককে কিছু বলেননি। পাক সমর্থক দাড়ি কাটার জন্য বসে পড়েন।
ভারতীয় সমর্থক খোঁচাটি হজম করে নিলেও সেলুনকর্মীর চোখে চোখ রেখে একটা করে দেন। দাড়ি ছাঁটতে বসা পাক সমর্থককে শাহিদ আফ্রিদির বদলে ‘অভিনন্দন ছাঁট’ দিয়ে দেন নাপিত। পাক সমর্থক তখন হাঁউমাঁউ করে বলে, বাইরে এবার বন্ধুদের সঙ্গে মুখ দেখাব কী করে? বাবা তখন একটু আগে পাওয়া রুমালটা এগিয়ে দেন এবং বলেন, ‘বিশ্বকাপ নয়, অভিনন্দনের এঁটো চায়ের কাপ ছাড়া আর কিছুই পাবে না পাকিস্তান।’ এরপরেই পাঞ্জাবি ফোক সুরে বেজে ওঠে ‘মওকা! মওকা!’ আর পাঞ্জাবি ভাষাতেই স্ক্রিনে লেখা ভেসে ওঠে ‘ওয়ার্ল্ড কাপ তো পাপ্পু নু’! অর্থাৎ, তোমরা বিশ্বকাপ পাচ্ছ না।
কাট টু রিয়েল। ফাদার্স ডে’র বিশ্বকাপ ম্যাচেও ভারতের কাছে হেরে গিয়েছে পাকিস্তান। এর আগে ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৫-র বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছ’বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। প্রতিবারই ভারতের কাছে হারতে হয়েছে পাকিস্তানকে।