রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
পুলিস মুখপাত্র রুয়ান গুণশেখর বলেন, ‘গত রবিবারের বিস্ফোরণে জড়িত হামলাকারীরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রত্যেকেই শিক্ষিত ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। আত্মঘাতী হামলাকারীদের মধ্যে একজন ব্রিটেনে পড়াশুনো করত। সম্ভবত পরে উচ্চশিক্ষার জন্য সে অস্ট্রেলিয়াতেও গিয়েছিল। পরে সেখান থেকে ফিরে শ্রীলঙ্কায় থাকতে শুরু করে সে।’ তিনি আরও জানান, কলম্বোর সাংগ্রি-লা ও সিন্নামোন গ্র্যান্ড হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত ছিল এক মুসলিম পরিবারের দুই ভাই। তাদের বাবা কলম্বোর একজন ধনী মশলা ব্যবসায়ী। হামলার একদিন আগে সিন্নামোন গ্র্যান্ড হোটেলে গিয়ে ওঠে এক হামলাকারী। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সকালে ভিড়ে ঠাসা হোটেলের রেস্তরাঁয় বসে খাবার খাওয়ার সেখানে পায়চারি করতে করতেই বিস্ফোরণ ঘটায় সে। এদিন তাদের ছোটভাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিস। পাশাপাশি তল্লাশি চালানো হয় তাদের বাড়িতেও। সেখান থেকে কট্টরপন্থী বিভিন্ন বইপত্র, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক এবং একাধিক সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে, চিড়িয়াখানার কাছের একটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। হামলাকারীকে সাহায্য করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে ট্যাক্সিচালক হামলাকারীকে হোটেলে পৌঁছে দিয়েছিল, তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। তদন্তকারীদের অনুমান, ইস্টার রবিবারে হোটেলের পাশের সেন্ট মেরি’স গির্জায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ওই যুবক। কিন্তু কিছুদিন আগেই গির্জায় চুরি হওয়ায় ইস্টারের সকালে সেখানে প্রচুর সংখ্যক পুলিস মোতায়েন করা হয়েছিল। তা দেখেই সম্ভবত পরিকল্পনা বদল করে হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায় সে।
হামলার দিনদশেক আগে সতর্কবার্তা মিললেও গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্যই এই হামলা রোখা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, গত ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে হামলা হয়েছিল। সেই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৫০ জন। সেই হামলার বদলা নিতেই শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলেই প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, হামলার কিছুদিন আগে গোয়েন্দা দপ্তরের পক্ষ থেকে এনিয়ে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপাল সিরিসেনা বা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে হামলার সম্ভাবনা সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছয়নি। জানা গিয়েছে, আইএসের একটি মডিউলকে জেরা করে শ্রীলঙ্কায় হামলার সম্ভাবনার কথা জানতে পেরেছিল ভারতের তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। এপ্রিল মাসের প্রথমেই সেই তথ্য শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দাদের জানানোও হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এনআইএ কর্তারা। কিন্তু তারপরও হামলাকারীদের রোখা যায়নি। হামলা রুখতে না পারার প্রসঙ্গে রুয়ান বিজয়বর্ধনে বলেন, ‘সরকার এই ব্যর্থতায় দায় গ্রহণ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছু রদবদলের পরিকল্পনা করেছেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপাল সিরিসেনা।’ সূত্রের খবর, এই সাংবাদিক বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই জানা যায়, পুলিসের আইজি ও প্রতিরক্ষা সচিবকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।
বিস্ফোরণের পর থেকেই এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় এক কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন ন্যাশনাল থোউহিথ জামাতের (এনটিজে) বিরুদ্ধে। কিন্তু বুধবার গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এনটিজে নয়, হামলার পিছনে রয়েছে এই সংগঠনেরই একটি গোষ্ঠী। মূল এনটিজে থেকে বেরিয়ে আসা একটি দল এই হামলা চালায়। যদিও এই তথ্য সামনে আসার আগেই মঙ্গলবার হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন আইএস। এমনকী, নিজেদের মুখপত্র আমাক-এ হামলাকারীদের ছবিও প্রকাশ করা হয়। যদিও এই ধারাবাহিক হামলায় আইএস-যোগ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। এনটিজে থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদেশের কোনও জঙ্গি সংগঠনের যোগ মেলেনি বলেও জানান রুয়ান বিজয়বর্ধনে। পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। তার মধ্যেই হামলায় জড়িতদের খোঁজে মঙ্গলবার রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। সূত্রের খবর, বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে এখনও যতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই এনটিজে’র সঙ্গে যুক্ত।