কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
দাবা প্রতিযোগিতায় নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিশুদের সঙ্গে লড়তে হয়েছে তানিকে। তানি মুখোমুখি হয়েছে সেই সব অভিজাত পরিবারের শিশুদের, যাদের রয়েছে ব্যক্তিগত দাবা প্রশিক্ষক। আর তানির ছিল শুধু জয়ের অদম্য স্পৃহা। পুরো প্রতিযোগিতায় তানি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ হারাতে পারেনি তাকে। মাত্র এক বছর আগে দাবা খেলা শেখা তানির জন্য অবশ্য এটিই কোনও প্রথম শিরোপা নয়। খেলাটি শেখার পর থেকেই এতে তার দক্ষতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। আর এখন আশ্রয়কেন্দ্রে তার বিছানার পাশে রাখা রয়েছে সাতটি ট্রফি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নিউ ইয়র্কের পিএস ওয়ান সিক্সটিন স্কুলে তানি তার সহপাঠীর কাছ থেকে দাবা খেলা শেখে। পরে সে যোগ দেয় স্কুলের দাবা ক্লাবে। তানির পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ক্লাবের সংগঠক তার ফি মকুফ করেন। শুরুতে সর্বনিম্ন রেটিং পয়েন্টধারী হিসেবে ক্লাবের সদস্য হলেও তানি খুব দ্রুত উন্নতি করে।
পিএস ওয়ান সিক্সটিন স্কুলের অধ্যক্ষ জেন সু নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘জীবন কিভাবে বদলে যায়, তানির জয় তারই এক দারুণ উদাহরণ। এটি ভীষণ অনুপ্রেরণামূলক।’
২০১৭ সালে বোকো হারামের হামলার ভয়ে তানি ও তার পরিবার আমেরিকায় পালিয়ে আসে। এ বিষয়ে তানির বাবা কায়োড অ্যাডিউমি বলেন, ‘আমি আমার প্রিয় মানুষদের কাউকে হারাতে চাই না।’ কে চায় হারাতে প্রিয়জনকে? কেউই চায় না। আর এ জন্যই তানি, তার বড় ভাই ও মাকে নিয়ে তার বাবা চলে আসেন নিউ ইয়র্কে। এখানকার এক যাজকের সহায়তায় তাদের ঠাঁই হয় এক আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানে থেকেই পিএস ওয়ান সিক্সটিন এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি হয় তানি, যেখানে একজন দাবা প্রশিক্ষক ছিলেন। বলা যায় তাঁর কাছেই হাতেখড়ি তানির। খেলাটি ভীষণ পছন্দ হয় তানির। ফলে মা ওলুওয়াতোইন অ্যাডিওয়ামির কাছে সে বায়না ধরে দাবা ক্লাবে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু ওই ক্লাবের ফি চালানো সামর্থ্য ছিল না তানির পরিবারের। ফলে তানির মা ছেলের আগ্রহ নিজের অসংগতির কথা জানিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। এতেই কাজ হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবা ক্লাবের ফি মকুফ করে দিলে তানির ‘খুদে গ্র্যান্ডমাস্টার’ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাওয়ার সুযোগ পায়। এক বছর আগে মাত্র ১০৫ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তানি প্রথম কোনও দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। আর এক বছর পর এখন তার নামের পাশে সাতটি ট্রফি, আর ১ হাজার ৫৮৭ রেটিং পয়েন্ট। বলে রাখা ভালো বিশ্বের সেরা দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনের রেটিং পয়েন্ট এখন ২ হাজার ৮৪৫।
তানির বাবা এখন ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে উবার চালক হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি তিনি রিয়েল এস্টেটের বিপণনকর্মী হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স পেয়েছেন। আর তানির মা আবাসিক স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য সম্প্রতি একটি কোর্স পাস করেছেন। তাঁরা দুজনই ভীষণ লড়াই করছেন। অনিশ্চয়তা ভরা জীবনে নিজের সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে দুজনই কঠোর পরিশ্রম করছেন। একই সঙ্গে তানি আমেরিকায় স্থায়ী আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। আগামী আগস্টে এ বিষয়ে অভিবাসন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।