বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সুইডেনের বাসিন্দা এই কিশোরীর নাম গ্রেটা থুনবার্গ। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে নিজের মতো করে আন্দোলন শুরু করে সে। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। অনেকেই এই ছোট্ট মেয়ের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। সম্প্রতি তার এই অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি মিলেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে গ্রেটার নাম। মনোনয়নের খবর পেয়ে টুইটারে গ্রেটা লিখেছে, ‘এই মনোনয়নের জন্য আমি সম্মানিত ও কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য # স্কুল স্ট্রাইক শুরু করেছি। যত দিন করতে হয় তত দিন করে যাব আন্দোলন।’
এত কম বয়সে গ্রেটার নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নজর কেড়েছে পুরো বিশ্বের। প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে গত বছর কম বয়সী প্রভাবশালীদের তালিকায় ছিল সে। মূলত পড়ুয়া ও যুবাদের পরিবেশ রক্ষার কাজে উদ্বুদ্ধ করে গ্রেটা। পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্যে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনেও নেমেছে সে। গত বছর সে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনে অনশন শুরু করে সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি পায় সে। গত বছরের আগস্টে গ্রেটা শুক্রবার করে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সপ্তাহের ওই নির্দিষ্ট দিনে একাই পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রতিবাদী স্লোগান দিতে শুরু করে সে। প্ল্যকার্ড হাতে পার্লামেন্টের বাইরে তার এই ‘স্কুল স্ট্রাইক’ আন্দোলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৪ লক্ষ স্কুলপড়ুয়া অনুপ্রাণিত হয়। বিষয়টি নজর কাড়ে রাষ্ট্রনেতাদের। এরপরই জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি উপেক্ষা না করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে আবেদন জানায় সে।
পোল্যান্ড ও দাভোস ফোরামে রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর সারা বিশ্বে অনেক স্কুলপড়ুয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে গ্রেটা থুনবার্গ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সতর্ক করে গ্রেটা। চাঁচাছোলা ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর নাম করে সে সাফ বলে, ‘প্রিয় মিস্টার মোদি, শুধু আলোচনায় কাজ হবে না। আপনাকে এখনই পদক্ষেপ করতে হবে। যদি, এরকমই চলতে থাকে, তাহলে আপনি হেরে যাবেন। আর যদি আপনি হেরে যান, তাহলে মানব ইতিহাসে আপনি সবচেয়ে কুখ্যাত ভিলেনের তকমা পাবেন। আশা করি, আপনি সেটা চাইবেন না।’
পরিবেশ রক্ষার্থে এই কিশোরীর অবদানের কথা মাথায় রেখেই তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গ্রেটা থুনবার্গ যদি এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতে, তাহলে পাল্টে যাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাস। কারণ, গ্রেটাই হবে সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলজয়ী। এর আগে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ১৭ বছর বয়সে। নরওয়ের সোশ্যালিস্ট এমপি ফ্রেডি আন্দ্রে ওভস্টগার্ড বলেন, ‘আমরা গ্রেটা থুনবার্গকে মনোনীত করেছি। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যদি আমরা কিছু না করি, তাহলে তা যুদ্ধ, বিবাদ ও উদ্বাস্তু বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। গ্রেটা একটি গণ-আন্দোলন শুরু করেছে, যাকে আমরা শান্তি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবেই দেখছি।’
গ্রেটার এই আন্দোলনের প্রশংসা করেছে ইউএন উইমেনও। তারা ট্যুইট করেছে, ‘সুরক্ষিত ভবিষ্যতের লক্ষে যুব সম্প্রদায়ের কথা শোনাটা যে কত জরুরি, সেটা প্রমাণ করেছে ও।’ তবে, খ্যাতির পাশাপাশি বিস্তর সমালোচনাও হচ্ছে গ্রেটাকে নিয়ে। ব্রিটেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো গ্রেটার এই আন্দোলনের নিন্দা করেছে। সমালোচকদের দাবি, পড়াশোনা ছেড়ে এভাবে আন্দোলন করাটা ভুল। ভ্রান্ত নীতির দ্বারা পরিচালিত স্কুলপড়ুয়াদের প্রশংসা করাটাও স্নেহশীলতার আতিশয্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও, যাবতীয় সমালোচনার উত্তর নিজের চেনা মেজাজেই দিয়েছে গ্রেটা। বলেছে, ‘যাঁরা আমাদের স্কুলে ফেরত পাঠাতে চায় তাঁদের বলতে চাই, কোনও পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সত্যিই খুব ছোট। কিন্তু, আমাদের আন্দোলন প্রতিদিনই কলেবরে বাড়ছে। এই গ্রহে যতটুকু রশদ বেঁচে আছে, সেটাই সুষ্ঠভাবে ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে আমাদের। আমাদের দাবি একটাই, ভারী ভারী বিজ্ঞানের কথা না আউড়ে সেগুলিকে মন দিয়ে শুনুন। তারপর সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করুন।’