গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ভারতে শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে চলেছে আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন। শিক্ষা বিস্তারে ১৫০টিরও বেশি অলাভজনক সংস্থাকে নিয়মিতভাবে অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে এই ফাউন্ডেশন। সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের উন্নয়নেও বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত আর্থিক অনুদান দিয়ে চলেছে সংগঠনটি। আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিচালনা করে। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয় তরুণ অধ্যাপক ও গবেষকদের সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক বিভাগ চালু করেছে। শুধু ডিগ্রি প্রদান নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার জন্যও উন্নতমানের সুযোগও সবিধা দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে নিয়মিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পেশাদারি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। খুব শীঘ্রই বেঙ্গালুরুতে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হল পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রীকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া। খুব শীঘ্রই উত্তর ভারতেও এ ধরনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজিম প্রেমজি।
কয়েকদিন আগেই একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছিল যে গত পাঁচ বছরে সেবামূলক কাজে ভারতের ধনকুবেরদের অবদান কমেছে। তবে সমীক্ষা যাই বলুক না কেন, প্রেমজির এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নজির সৃষ্টি করেছে। প্রেমজি নিজেও মনে করেন, মূলত দুটি কারণে দেশের বিত্তশালী সমাজ দানধ্যানে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন আমেরিকা থেকে। প্রথমত, সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারার ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবার অনেক বিস্তৃত হয়। দ্বিতীয়ত বেশিরভাগ উচ্চবিত্তই মনে করেন, তাঁদের সম্পত্তির উপর একমাত্র অধিকার রয়েছে তাঁদের সন্তান সন্ততির। মায়ের কাছ থেকে সমাজসেবামূলক কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। মা ছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু কোনওদিন প্র্যাকটিস করেননি। মুম্বইতে তিনি পোলিও ও সেরিব্রাল পলসি-তে আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি অর্থোপেডিক হসপিটাল গড়ে তোলেন। ২৭ বছর বয়স থেকে ৭৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ওই হাসপাতালেরই চেয়ারপার্সন ছিলেন। সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরশীল ছিল এই হাসপাতাল যা কখনওই সময়ে আসত না। তাই সারাজীবন ধরেই হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে গিয়েছেন তাঁর মা।
বরাবরই মিতব্যয়ী বলে পরিচিত। কোনওদিন দামি গাড়ি চড়েননি। স্টেটাস সিম্বলের যাবতীয় ট্যাবু ভেঙেচুরে দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে প্রেমজি আফশোস করে বলেন, ‘আমি অনেক দেরিতে শুরু করেছি। আজ থেকে ১৪-১৫ বছর আগে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করে প্রথম সমাজসেবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। গত চার বছরে অবশ্য অনেকটাই গতি পেয়েছে সেই উদ্যোগ। কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলেছি।’ ওই সাক্ষাৎকারে প্রেমজি বলেছিলেন, ‘বিত্তশালীদের নয়া প্রজন্ম অনেক বেশি উদার উত্তরসূরিদের চেয়ে। আসলে আমার মনে হয়, এঁদের স্ত্রী বা ‘বেটার হাফ’ –কে উদ্বুদ্ধ করা আশু প্রয়োজন। কারণ স্ত্রীরা সামাজিকভাবে অনেক বেশি দায়িত্বশীল।’ অর্থদান করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাবে প্রেমজি বলেন, ‘সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সমস্যার গভীরতা, তার বিস্তার আর ব্যপ্তি । ভীষণ হতাশায় ভুগতাম। যত বড়ই প্রতিষ্ঠান হোক না কেন তাকে সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষা করতেই হয়। এর থেকে মুক্তি নেই।’