বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় টারান্ট। সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ৪৯ জন। কিন্তু, প্রথম মসজিদে হামলা চালিয়ে ট্যারান্ট যখন লিনউডে হামলা চালাতে শুরু করেছে, তখন মসজিদের ভিতর থেকে পিওএস হাতে নিয়ে বন্দুকবাজের সামনে রুখে দাঁড়ান অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত আজিজ। দেখামাত্রই তা টারান্টের দিকে ছুঁড়ে দেন তিনি। লুকিয়ে পড়েন বাইরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আড়ালে। বন্দুকবাজ আজিজকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে কোনওক্রমে বেঁচে যান তিনি। পরক্ষণেই টারান্টের ফেলে দেওয়া ফাঁকা বন্দুক নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যান আজিজ। উদ্দেশ্য একটাই — টারান্টের লক্ষ্য ঘুরিয়ে দেওয়া। যাতে মসজিদে উপস্থিত তাঁর চার সন্তান এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা বেঁচে যান।
আজিজের কথায়, ‘বন্দুকবাজ যখন আমার হাতের বন্দুকটি দেখতে পায়, জানি না ও কী বুঝেছিল। কিন্তু, বন্দুকটি ফেলে দেয়। আর তখনই আমি বন্দুক হাতে ওকে ধাওয়া করি। বুঝতে পারলাম আমাকে ভয় পেয়েছে।’ এমন সময় বন্দুকবাজ তার গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয়। যদিও, পথে দু’জন পুলিস তাকে পাকড়াও করে ফেলে। মসজিদে ফিরে আসেন আজিজ। যদিও হাতে বন্দুক ধরায় তাঁকে প্রথমে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী, অনেকে আজিজকে বন্দুকবাজ আখ্যা দিয়ে দিয়েছিল।
পরে মসজিদে ঢুকে আজিজ দেখেন, চারিদিকে শুধু পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত নিথর দেহ। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার আজিজের বন্ধু। প্রথমে তাঁর সন্তানদের খুঁজে না পেলেও পরে সবাইকে দেখতে পান তিনি। যদিও, প্রত্যেকে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে কাঁপছিল। আজিজের কথায়, ‘ঘটনার পর থেকে আমি ঘুমতে পারছি না। চোখ বুঝলেই সর্বত্র রক্তাক্ত মৃতদেহ। আমরা স্তম্ভিত ও হতবাক। ওদেরকে তো আর ফেরৎ পাব না!’
নিজেকে বাজি রেখে এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচানোয় আজিজের সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তামাম নিউজিল্যান্ডবাসী। রাতারাতি ‘হিরো’ তকমা জুটে গিয়েছে তাঁর। ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানাতে আজিজের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ পাঠিয়েছেন কেক, কেউ শুভেচ্ছা বার্তা লিখে কার্ড। কেউ আবার ফুলের তোড়া। কিন্তু, নিজেকে হিরো বলে মানতে নারাজ আজিজ। তাঁর কথায়, ‘ওই পরিস্থিতিতে আপনার বিশেষ কিছু ভাবার সময় থাকে না। সেই মুহূর্তে যা মাথায় আসে তাই করতে হয়। নিজে মারা যেতে পারি, এটা জেনেও বাকিদের বাঁচাতে চেয়েছি।’
দেশবাসী এভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি আজিজ। তিনি বলেছেন, ‘সেকারণেই আমি নিউজিল্যান্ডকে ভালোবাসি। আসলে আপনি এখানে যে পরিমাণ ভালোবাসা, সম্মান পাবেন, তা অন্য কোথাও পাবেন না।’ প্রসঙ্গত, আড়াই বছর আগে নিউজিল্যান্ডে থিতু হওয়ার আগে তিন দশক সিডনিতে কাটিয়েছেন আজিজ। আফগানিস্তান থেকে শিশু শরণার্থী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এসেছিলেন তিনি। অন্যদিকে, শুক্রবারের প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে আল নুর মসজিদে গিয়েছিল ক্যাশমিয়ার হাইস্কুলের তিন পড়ুয়া। বন্দুকবাজের হামলায় দু’জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। তৃতীয় পড়ুয়া জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।