গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
আদালতের বাইরে ক্রাইস্টচার্চ শহরের চিত্রটা কিন্তু পুরোপুরি অন্যরকম। হামলাকারী যুবকের মধ্যে অনুতাপের চিহ্ন না থাকলেও অনুতপ্ত শহরের সাধারণ মানুষ। এরকম নারকীয় হত্যালীলা তাঁদের শহরে হওয়ার জন্য। শুধু ক্রাইস্টচার্চ নয়, গোটা নিউজিল্যান্ড থেকে সুস্পষ্ট বার্তা আসতে শুরু করেছে। তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে রয়েছেন। এমনিতে নিউজিল্যান্ড পিস ইনডেক্সে বিশ্বে দু’নম্বরে রয়েছে। আইসল্যান্ডের পরই। শান্তিপূর্ণ হাসিখুশি জীবনে অভ্যস্ত মানুষ। গতকাল দুই মসজিদে শ্বেতাঙ্গ যুবকের হামলায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, নিউজিল্যান্ডে গোটা বছরে এত মানুষ খুন হন না। একটি সম্প্রদায়কে যেভাবে নিশানা বানানো হয়েছে, তাকে অনুতপ্ত সাধারণ মানুষ। স্বজনহারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে চলছে বিভিন্ন উদ্যোগ। চলছে অর্থ সংগ্রহ। গুলিবিদ্ধ জখম মানুষের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা চলছে। রয়েছে দু’টি শিশুও। কয়েকজনের অবস্থা সঙ্কটজনক। হাসপাতালগুলিতে পরিজনদের ভিড়। আর সহনাগরিকদের তরফে তাঁদের জন্য চলছে খাবার সংগ্রহ। পাশে দাঁড়ানোর বার্তা আছড়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলিতেও। সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু পোস্ট রীতিমতো ভাইরাল। তার মধ্যে একটিতে লেখা হয়েছে, কোনও মুসলিম মানুষ যদি একা রাস্তায় চলতে ভয় পান, যদি বাজার দোকানে বেড়িয়ে ভয় লাগে, একা মনে হয়, তাহলে আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে হাঁটব।
গতকাল হামলা চলেছে ক্রাইস্টচার্চের আল নুর ও লিনউড মসজিদে। শোকের ছায়া দুই মসজিদ চত্বরেই। শহরের পুরনো কবরস্থানের ছবিটাও একই। চলছে একের পর এক কবরের মাটি খোঁড়ার কাজ। আল নুর মসজিদের কাছে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী সৌধ। সেখানে ফুল, হাতে লেখা কার্ড রেখে গোটা দিন নিহতদের প্রতি শোকজ্ঞাপনের পালা চলেছে। এরকমই একটি কার্ডে লেখা হয়েছে, এই নিরাপত্তাহীনতার জন্য দুঃখিত। ক্রাইস্টচার্চের মানুষ যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না, তাঁদের শহরে এমন ভয়াবহ হত্যালীলা চলেছে। তাঁরা স্তম্ভিত, আতঙ্কিত। লিনউড মসজিদের ইমাম ইব্রাহিম আবদুল হালিমের বক্তব্য, এই হত্যালীলা সত্ত্বেও আমরা এই দেশটাকে ভালোবাসি। কট্টরপন্থীরা আমাদের আত্মবিশ্বাস ভাঙতে পারবে না। এদিন ক্রাইস্টচার্চে আসেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন। মাথা কালো কাপড়ে ঢেকে হতাহত পরিবারগুলির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে মুসলিম দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ রয়েছেন। তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত একজন সৌদি ও দু’জন জর্ডনের নাগরিকও রয়েছেন। ছয় পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর মিলেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিক আচরণে মুগ্ধ শাহরা আহমেদ। সোমালিয়ার বংশোদ্ভূত নিউজিল্যান্ডের নাগরিক তিনি। শাহরার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণের অর্থ অনেক বড়। এর অর্থ, আমি আপনাদের সঙ্গেই রয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আর্ডার্ন এদিন জানিয়েছেন, হামলাকারী যুবক ২০১৭ সালের নভেম্বরে গান লাইসেন্স পেয়েছিল। এরপর আইনিভাবেই সে অস্ত্রশস্ত্র কেনা শুরু করেছিল। প্রথমে কেনে দু’টি সেমি-অটোমেটিক এআর-১৫ আগ্নেয়াস্ত্র। এর এক মাস পরে দু’টি শটগান ও একটি লিভার-অ্যাকশন গান কেনে সে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা, দেশের বন্দুক সংক্রান্ত আইন পাল্টাতে চলেছে।
মূল হামলাকারী টারান্টের সঙ্গেই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে আরও দু’জনকে। যদিও হামলার সঙ্গে এদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তাদের মধ্যে একজন ১৮ বছর বয়সি ড্যানিয়েল বরো। তার বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, সিডনির উত্তরে গ্রাফটনে অবস্থিত টারান্টের শৈশবের বাড়িতে তদন্তে যাওয়া হয়েছিল। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।