বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবেয়াদুল কাদের দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, আনন্দের আতিশয্যে যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের সঙ্গে ‘বাড়াবাড়ি’ আচরণ না করা হয়। দলীয় কর্মীদের বিজয় মিছিল করতে নিষেধ করেছেন হাসিনা। বিরোধীদের ভোটের রায় মেনে নিতে অনুরোধ করেছেন আওয়ামি লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। লিগ নেত্রী দীপু মণি বলেছেন, আওয়ামি লিগ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।
অবশ্য গো-হারা হারের পর বিরোধীরা এই নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের। এদের মধ্যে বেশিরভাগই অবশ্য শাসক জোটের। জখম হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। বিরোধীদের অভিযোগ, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন রক্তক্ষয়ী নির্বাচন দেখা যায়নি। সমগ্র নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে শাসক দল। তাঁদের অভিযোগ, বহু বুথে তাঁদের এজেন্ট বসতে দেওয়া হয়নি। ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে, এই প্রহসনের নির্বাচন অবিলম্বে বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন করে ভোট নেওয়া হোক। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কামাল হোসেন বলেছেন, আমাদের কাছে খবর এসেছে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। আমরা এই ফল মানছি না। নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে নতুন করে নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি। ঐক্যফ্রন্টের শরিক বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফকরুল ইসলামও বলেছেন, এই ভোট নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, এবারের ফল প্রমাণ করল, এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। পাঁচ বছর আগে সাধারণ নির্বাচন বয়কট করার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছিল, তা যে সঠিক ছিল, তা এই ফল থেকে প্রমাণিত।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ। কমিশনের তরফে আওয়ামি লিগকে বিপুল জয়ের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়েছে। কমিশন বলেছে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। দেখে শুনে মনে হয়েছে মানুষ ভোট উৎসবে মেতেছিল। পুনরায় ভোটের দাবি খারিজ করে দিয়েছে কমিশন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, ভোট ছিল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। এবারের ভোট গতবারের চেয়েও ভালো হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন তাঁরা।
২০১৪ সালের দশম সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি। ফলে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে হাসিনার দল। টানা ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। এবার ভোটে জয়লাভ করতে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে হাসিনার মুখোমুখি হয়েছিল খালেদা জিয়ার দল। খালেদা জিয়া জেলবন্দি থাকায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মির্জা ফকরুল। কিন্তু মূলত দুর্নীতির ইস্যুকে সামনে রেখে বিএনপিকে ধরাশায়ী করে দিলেন হাসিনা। রেকর্ড টানা তৃতীয়বার তিনি ক্ষমতায় রইলেন। নিশ্চিতভাবেই তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন। ফলে এই নিয়ে মোট চারবার প্রধানমন্ত্রী হবেন হাসিনা। ১৯৭৩ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু মুজিবের আওয়ামি লিগ পেয়েছিল ২৯৩টি আসন। আর হাসিনার সেরা ফল হয়েছিল ২০০৮ সালে। সেবার তাঁর জোট পেয়েছিল ২৬৩টি আসন। এবার সেই রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছেন মুজিব-কন্যা। প্রায় ধরে ফেলেছেন বাবার রেকর্ড ফলকে।
জানা গিয়েছে, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জেলে বসেই টিভিতে ভোটের ফল শুনেছেন। এই ফল নিশ্চিতভাবেই তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিল।