গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
প্রসঙ্গত, সপ্তাহ দুয়েক আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়। কিন্তু উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়নি। টানা ১১০ দিন ধরে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় চরম সমস্যায় সাধারণ মানুষ। একদিকে স্বাভাবিক জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মানুষ এমনিতেই ঘরের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই অবস্থায় ঘরে বসে যে তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করবেন, সেই পরিস্থিতিও কাশ্মীরে নেই। গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর ইন্টারনেট পরিষেবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অথচ রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষণা অনুযায়ী ইন্টারনেট পরিষেবার সাহায্য নেওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেই পরিষেবাই সরকারি তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত বছর উপত্যকায় ৬৫ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবং গত আট বছরে সেই সংখ্যা ১৭৬ বার। এছাড়া ২০১৬ সালে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা ৬ মাস উপত্যকায় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। চলতি বছরেও ইতিমধ্যে ৫১ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। এখন স্মার্টফোন ছাড়া পুরনো পদ্ধতিতে জীবনযাপন করা শুরু করে দিয়েছেন কাশ্মীরবাসী। একসময় যে স্মার্টফোন বিক্রিতে তুমুল ঝড় উঠেছিল, এক ধাক্কায় সেই চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
ইন্টারনেট পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞার জেরে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়া এবং ব্যবসায়ী মহল। জম্মু ও কাশ্মীর স্কুল বোর্ডের পরীক্ষার দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটের সাহায্য ছাড়া স্কুলপড়ুয়াদের বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হচ্ছে। এই অবস্থায় বারামুল্লার বাসিন্দা স্কুলপড়ুয়া ১৭ বছরের সমীর আহমেদ তাঁর ভোগান্তির কথা জানান। আর একমাস পরই দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় পড়ার নোট জোগাড় করতে মহা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আহমেদ বলেন, ৫ আগস্ট থেকে স্কুল বন্ধ রয়েছে। কাজেই স্কুলেও সেভাবে পড়াশোনার দিকে নজর দেওয়া যায়নি। এই অবস্থায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার গিয়ে তাঁকে শ্রীনগর থেকে পরীক্ষার নোট জোগাড় করতে হচ্ছে। তিনি এও জানান, ‘আমরা পরীক্ষার সিলেবাসও শেষ করতে পারিনি। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাত্র ৬০ শতাংশ সিলেবাসই স্কুলে পড়ানো হয়েছে। আগামী দিনে আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসবেন। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় ফর্ম ফিলআপও করতে পারছি না।’ সমীরের মতো সমস্যায় পড়েছেন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্র সাকিব সহ আরও অনেকেই। এছাড়া এই একই কারণে কোনও ই-কমার্স সংস্থা কাশ্মীরে ব্যবসা করতে পারছে না। তাতে সাধারণ মানুষের যেমন সমস্যা হচ্ছে, সেরকমই ব্যবসায়িক ক্ষতিও হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সপ্তাহ দুয়েক ধরে উপত্যকায় স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছিল বলে প্রশাসন দাবি করেছে। তবে গত তিনদিন ধরে শহরের প্রধান বাজার এলাকা সহ প্রায় সব এলাকাতেই ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। এমনকী কাশ্মীরের অন্যতম জামিয়া মসজিদে এদিনও প্রার্থনা হয়নি। গত ৫ আগস্ট কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা খারিজ করার পর এই মসজিদে প্রার্থনা বন্ধ রয়েছে। এই নিয়ে টানা ১৬টি শুক্রবার ওই মসজিদে প্রার্থনা হল না।