কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শান্ত হয়ে দাঁড়ান হনুমান গড়হি গলির মুখে। রামলালা দর্শনের জন্য লাইন বাইরে পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন আর ভিতরে ঢোকা যাবে না। একটু ধৈর্য ধরুন। একটু পর আবার গেট খুলবে। অপেক্ষা করুন। চিন্তা নেই, সকলের দর্শন হবে। আজ রামলালার দরজা বন্ধ হচ্ছে না।
কার্তিক পূর্ণিমা ম্যাজিক জানে। গত তিনদিন ধরে যে শহর ছিল নিঝুমপুরী, আচমকা একটা পূর্ণচন্দ্রের পঞ্জিকা জাগিয়ে তুলেছে ঘুমন্ত সেই নগরীকে। সুপ্রিম কোর্টের রায় পরবর্তী সব আশঙ্কা, ভয় আর অবিরত পুলিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই অযোধ্যা ফিরল স্বমহিমায়। কার্তিক পূর্ণিমার স্নান করতে সরযু নদীতে আসা মানুষের ভিড়ে অযোধ্যা যেন মিনি কুম্ভ মেলা। গৃহস্থের পিছনে সন্ন্যাসী দাঁড়িয়ে ভাণ্ডারার লাইনে। গতকাল পর্যন্ত যে রাস্তা আর সরযুতীর ছিল শূন্যতায় ঘেরা, সেখানে যাদুকাঠিতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মেকশিফট দোকান। বাতাসে ভেসে বেড়াল সিঙ্গারার গন্ধ, ফুলের গন্ধ, নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ, ধূপের গন্ধ, ভক্তির গন্ধ। গতকাল মধ্যরাত থেকে দলে দলে মানুষ নেমেছে অযোধ্যা আর ফৈজাবাদ স্টেশনে। আজমগড়, বস্তি, বরাবাঁকি, গোরখপুর, পূর্ব বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় থেকে লক্ষ মানুষ এসে নিমেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের থমথমে পরিবেশকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল দিনভর। বাইপাস ধরে, পরিক্রমা রোড ধরে, তেহরি মোড় থেকে, ফৈজাবাদ হাইরোড বরাবর...হাঁটছে মানুষ। অযোধ্যা নগরীতে কোনও যান বাহন ঢুকবে না। অটো কিংবা ই রিকশ সবই আটকে দেওয়া হয়েছে শহরের বাইরে বহু দূরে। তাই একমাত্র পথ হাঁটা।
কোতোয়ালি থানা, তুলসী উদ্যান, লক্ষ্মণ ঘাট, নয়াঘাট, হনুমান গড়হি সর্বত্র কন্ট্রোল রুম খুলতে হয়েছে শুধু হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশের জন্য। মাথার উপরে চারটে পবন হংস চপার চক্কর কাটছে। মাঝেমধ্যেই দ্রুত গতিতে মাউণ্টেনিয়ারিং পুলিশের ঘোড়া হু হু করে ছুটে যাচ্ছে ভিড় ভেদ করে। হ্যাণ্ডমাইক হাতে বড় পুলের নীচ থেকে গোন্দা জেলার ঘাটে শোঁ শোঁ করে যাওয়া পুলিশের স্পিডবোট ঢেউ তুলছে সরযুতে, ছবি উঠছে মোবাইলে। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আধা সামরিক বাহিনী আর পুলিশকে মানুষ ভয় পেয়েছে। চরম কড়াকড়িতে দেখা গিয়েছিল দলে দলে ভক্ত পর্যটক অযোধ্যা ছেড়ে ফিরে যাচ্ছে। কারণ পুলিশের চেকিং আর ধমক। ৭২ ঘন্টা পর অন্য দৃশ্য। বন্দুকের নল সরিয়ে রেখে আজ পুলিশকে নামতে হল গাইডের ভূমিকায়। দূর থেকে আসা মানুষগুলোকে দিনভর বোঝাতে হল কোনদিকে রাম জন্মভূমি, রামলালা দর্শনের পর ওই দিক থেকে গিয়ে কনকবিহারী মন্দির অবশ্যই যেন দেখে নেয়, সরযু নদীর কোন ঘাট তুলনামূলকভাবে ফাঁকা সব বলে দিতে হল সরল মানুষগুলিকে। মোটরবাইকে চেপে পুলিশ ইন্সপেক্টররা ঘন ঘন বললেন, সকলে একসঙ্গে স্নান করতে নামবে না, দু’জন স্নান করবে, বাকিরা জামাকাপড় ব্যাগ পাহারা দেবে বুঝলে? কোতোয়ালি থানার উল্টোদিকে মুসলিম দোকানিদের হাত থেকে নানা রঙের চুড়ি পরলেন পূণ্যস্নান সেরে আসা মেয়েবউরা। অযোধ্যা। ভয়কে হারিয়ে দিল ভক্তি! আশঙ্কাকে হারল কার্তিক পূর্ণিমার কাছে!