নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ৭ নভেম্বর: মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে অনড় থাকা শিবসেনা আচমকা উপলব্ধি করেছে, গরিষ্ঠতা অর্জন করতে তাদের বিধায়কদেরই চুরি করে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে এতকালের জোট শরিক বিজেপি। সেই আশঙ্কায় সরকার গঠন নিয়ে টানাপোড়েন কিংবা দর কষাকষিকে পিছনের সারিতে ফেলে আজ শিবসেনা নিজেদের ৫৬ জন বিধায়ককে অটুট রাখতে হোটেলবন্দি করে ফেলেছে। মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকার একটি হোটেলে রাখা হয়েছে একঝাঁক বিধায়ককে। আর বিধায়কদের বাকি অংশকে আরও সুরক্ষিত স্থানে জায়গা দেওয়া হয়েছে। সেই স্থান হল স্বয়ং শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব থ্যাকারের বাসভবন মাতশ্রী। এই মাতশ্রীর আউটহাউসে শিবসেনা বিধায়কদের আপাতত থাকতে হবে। বিজেপি অবশ্য এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলেছে, এ ভাবে অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার প্রশ্নই আসছে না। কারণ আমরা এখনও নিশ্চিত যে, মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনারই সরকার গঠিত হবে। অন্যদিকে, আজ বিজেপি বিধায়ক দল মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, সেই বৈঠকে বিজেপি পরিষদীয় দল সরকার গঠনের দাবি জানাবে। কিন্তু সেই দাবি করা হয়নি। বরং আলোচনা হয়েছে, কোনওদলই সরকার গঠনের মতো গরিষ্ঠতার সংখ্যা যদি প্রমাণ করতে না পারে, তা হলে বিকল্প আইনি ব্যবস্থা কী আছে। এদিনই আবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল আশুতোষ কুম্ভকানি। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়া থেকে স্পষ্ট এখনও, বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে কোনও সমঝোতা হয়নি। তার কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, শিবসেনা এখনও সেই একই জেদে অনড়। অর্থাৎ সরকার গঠন করতে হলে আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ দিতে হবে। এদিন নিজের বাসভবনে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকও করেন উদ্ধব। সেখানে সব বিধায়কই জানিয়ে দেন ৫০-৫০ ফর্মুলাতেই সরকার গঠন করতে হবে। এবং সরকার গঠনের ব্যাপারে উদ্ধবকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন বিধায়করা। পরে উদ্ধব জানিয়ে দেন, বিজেপির সঙ্গে সরকার করতে তিনি আগ্রহী। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা পালন করতে হবে। অর্থাৎ ৫০-৫০ তত্ত্ব বিজেপিকে মানতে হবে।
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশ শুধু যে বিজেপি ও শিবসেনার শরিকি বিবাদকেও প্রকট করেছে তাই নয়, বিজেপির অন্তর্বিরোধকেও সামনে এনে ফেলেছে। মহারাষ্ট্রে যেহেতু কোনও ফর্মুলাতেই সরকার গড়া সম্ভব হচ্ছে না, তখন সঙ্ঘ পরিবারের সমাধান ছিল, নীতীন গাদকারিকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। কিন্তু যেহেতু ফলপ্রকাশের দিন প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই দিল্লিতে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, মহারাষ্ট্রে এবারও মুখ্যমন্ত্রী হবেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশই, তাই সেই ঘোষণা থেকে সরে আসাটা বস্তুত বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে অসম্মানজনক। সেই বার্তা গাদকারিকেও দেওয়া হয়। আজ তাই গাদকারি নিজেই জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে নেই। মুখ্যমন্ত্রী হবেন নেবেন্দ্র ফড়নবিশই। একই সঙ্গে সঙ্ঘকে এই আলোচনায় টেনে আনার কোনও দরকার নেই বলেও জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণমন্ত্রী। অর্থাৎ গাদকারিকে দিয়েই বিজেপি শীর্ষ নেতূত্ব বার্তা দিল যে, মোদিই এখনও শেষ কথা। তিনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাই হবে। নচেৎ সরকার হবে না। এই কঠোর বার্তা পেয়ে শিবসেনাও বেশ কিছুটা উদ্বিগ্ন। কারণ, বিজেপি আলোচনার কোনও বাড়তি উৎসাহ দেখাচ্ছে না এবং এখনও পর্যন্ত উদ্ধব থ্যাকারের সঙ্গে অমিত শাহ অথবা নরেন্দ্র মোদি যোগাযোগই করেননি। উদ্ধব থ্যাকারেকে চাপে রেখে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, আলোচনা করবে বিজেপি মহারাষ্ট্র ইউনিট। কিন্তু এসব ছাপিয়ে শিবসেনার কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ দলকে অটুট রাখা। দলের মুখ সঞ্জয় রাউত যতই বলুন, ব্ল্যাকমেলিং আর ভয় দেখানোর রাজনীতি এখানে চলবে না, বিজেপি গোপনে বিধায়কদের টিমে সিঁধ কাটতে পারে বলে চরম শঙ্কায় শিবসেনা। তাই সব বিধায়কই হোটেল ও মাতশ্রীবন্দি।