শ্রীনগর, ৭ নভেম্বর (পিটিআই): প্রবল তুষারপাতের কবলে গোটা কাশ্মীর। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সড়কপথে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উপত্যকার যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার তুষারপাতের জেরে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল থেকে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে ওঠানামা করতে পারেনি কোনও উড়ান। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে যাওয়া-আসার সমস্ত উড়ান আজকের দিনের জন্য বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া। এদিকে প্রবল তুষারপাতের জেরে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। কুপওয়ারা জেলায় দু’টি পৃথক দুর্ঘটনায় দু’জন সেনা জওয়ান এবং দু’জন সেনার পোর্টার সহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার রাতে সেনার একটি গাড়ি কুপওয়ারার লানগেট যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে। তুষারপাতের জেরে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। গাড়িটি রাস্তা থেকে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই রাইফেলম্যান ভীম বাহাদুর পান এবং গুন্নের অখিলেশ কুমারের মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর তরফে তাঁদের শেষশ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিকে হিমবাহ ধসে সেনার দুই পোর্টারের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের নাম মঞ্জুর আহমেদ এবং ইশাক খান। পুলিস জানিয়েছে, কুপওয়ারাতে সেনার একটি চৌকিতে মালপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় হিমবাহ ধসে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে জম্মু ও কাশ্মীর এক বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তুষারপাতের জেরে শ্রীনগরের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। মঞ্জুর আহমেদ নামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন দপ্তরের ওই কর্মী পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। তখন একটি বিদ্যুতের খুঁটি তাঁর উপর ভেঙে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। শ্রীনগরের জেলা প্রশাসন তাঁর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে গাছের নীচে চাপা পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। শ্রীনগরের হাবাক এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। পুলিস জানিয়েছে, তুষারপাত ও বৃষ্টির জেরে গাছটি রাস্তার উপর ভেঙে পড়লে ওই ব্যক্তি চাপা পড়েন। এছাড়াও একটি গাড়ি ও অটো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে তুষারপাতের জেরে এদিন ভোর থেকে উপত্যাকার বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তার একাধিক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ পড়ে রয়েছে। শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার শাহিদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, রাস্তা থেকে বরফ সরানোর কাজে অন্তত ৪৫টি যন্ত্র লাগানো হয়েছে। রাজধানী শ্রীগরে ১১ সেন্টিমিটার এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের একাধিক স্থানে ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার তুষারপাত হয়েছে। বুধবার থেকে সাদা বরফে ঢেকেছে কাশ্মীরের অন্যতম পর্যটন স্থান গুলমার্গ ও সোনমার্গ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গুলমার্গে ৬২ সেন্টিমিটার তুষারপাত হয়েছে। পাশাপাশি উপত্যকার তাপমাত্রাও একধাক্কায় অনেকটাই নীচে নেমে গিয়েছে। বুধবার রাতে শ্রীনগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ০.৬ সেলসিয়াস। গত দু’দিনের মধ্যে শহরের তাপমাত্রা প্রায় ৬ ডিগ্রি নীচে নেমে গিয়েছে। গুলমার্গের তাপমাত্র ছিল মাইনাস ৪.৬ ডিগ্রি। এছাড়াও কার্গিল, লে ও লাদাখ অঞ্চলেও তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই নেমে গিয়েছে। জম্মুর ডোডা, রাজৌরি, পুঞ্চ ও কাঠুয়াতেও তুষারপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আঞ্চলিক আবহাওয়া দপ্তর। এদিকে বুধবার রাত থেকে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত আড়াই হাজার গাড়ি সারিবদ্ধ হয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে পড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও তুষারপাত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।