দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: ১৪ সেপ্টেম্বর: পুজোর আগে কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) পেনশনভোগীদের বর্ধিত ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ নির্ধারিত হওয়া নিয়ে তীব্র সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের আওতাধীন কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনের (ইপিএফও) অছি পরিষদের বৈঠকের পর প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এই সময়সীমার মধ্যে ইপিএফের ন্যূনতম মাসিক পেনশনের বর্ধিত পরিমাণ কত হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে কোনওরকম বৈঠকই করেননি কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার। যার জেরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে প্রস্তাবিত ওই বৈঠকের পর ফের অছি পরিষদের যে মিটিং ডাকার কথা জানিয়েছিলেন গঙ্গওয়ার স্বয়ং, তা নিয়েও আর কোনও উচ্চবাচ্য করছে না ইপিএফও। ফলে গোটা বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ইপিএফ পেনশন গ্রাহক মহলে। পুজো বা দেওয়ালির আগে আদৌ এ ব্যাপারে তাঁরা কোনও সুখবর পাবেন কি না, সেই ব্যাপারে চরম বিভ্রান্তিতে রয়েছেন ইপিএফ পেনশনপ্রাপকেরা।
ইপিএফওর আওতায় থাকা ইপিএস (এমপ্লয়িজ পেনশন স্কিম) গ্রাহকদের ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করতে গত ২১ আগস্ট হায়দরাবাদে অছি পরিষদের বৈঠক ডেকেছিল কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠন। সেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ইপিএফ পেনশন গ্রাহকদের ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু সেই বর্ধিত ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ কত হবে, তা নিয়ে গত ২১ আগস্টের বৈঠকে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনো যায়নি। কেন্দ্রের প্রস্তাব ছিল, এর পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দু’হাজার টাকা করা হোক। কিন্তু তা মেনে সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, ন্যূনতম মাসিক ইপিএফ পেনশনের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে অন্তত তিন হাজার টাকা করতে হবে। যেহেতু অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য ইতিমধ্যেই মাসিক তিন হাজার টাকা পেনশনের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। সেইসময়ই কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার জানিয়েছিলেন, মাসের ন্যূনতম পেনশন তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব নিয়ে তিনি ওই বৈঠকের সাতদিনে মধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারপর অবিলম্বে গুজরাতে ইপিএফও অছি পরিষদের পরবর্তী বৈঠক ডেকে ন্যূনতম মাসিক পেনশনের বর্ধিত পরিমাণ স্থির করবেন। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রক আর কোনও উচ্চবাচ্য না করায় ধন্দে পড়েছেন কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের পেনশন প্রাপকেরা।
ইপিএফও সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে ইপিএফ পেনশন গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৬০ লক্ষ। যাঁদের মধ্যে মাসে এক হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন পান প্রায় ২০ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মাসে দু’হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন পান প্রায় ১৬ লক্ষ ইপিএস গ্রাহক। মাসিক বর্ধিত ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ নির্ধারণে দেরি হওয়ায় চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছেন এই ৬০ লক্ষ পেনশন গ্রাহকই। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে মাসিক ন্যূনতম এক হাজার টাকা ইপিএফ পেনশন দিতে সরকারের বছরে খরচ হয় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তা বাড়িয়ে মাসে দু’হাজার টাকা করা হলে কেন্দ্রের খরচ হবে বার্ষিক প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকা। তিন হাজার হলে এর পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই আরও বৃদ্ধি পাবে। মূলত এটা নিয়েই চিন্তায় রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।