ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ট্যুইটারে লেখা হয়েছে, ‘প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট আইনজীবী রাম জেঠমালানির প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। নিজের স্বভাবগত বাকপটুতায় জনসাধারণের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মতপ্রকাশের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। দেশ একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, মহান পণ্ডিত এবং প্রতিভাকে হারাল।’ জীবিত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন রাম জেঠমালানি। শোকবার্তায় প্রয়াত নেতার সাহসকে কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি মোদি। প্রধানমন্ত্রী ট্যুইটারে জানিয়েছেন, ‘দেশ একজন ব্যতিক্রমী আইনজীবী এবং একজন আদর্শ ব্যক্তিত্বকে হারাল। তিনি একজন রসিক, সাহসী, এবং যে কোনও বিষয়ে দৃঢ়ভাবে নিজের মতামত পেশ করার ব্যাপারে কখনও পিছপা হতেন না। এবং তিনি নির্ভয়ে তা করতেন । জরুরি অবস্থার কালো দিনেও তাঁর মনোবল এবং মানুষের স্বাধীনতার জন্য লড়াই দেশ কখনও ভুলবে না।’ রাম জেঠমালানির মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি বলেই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জেঠমালানিকে একজন দক্ষ প্রশাসক এবং অভিজ্ঞ সাংসদ হিসেবে অভিহিত করে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট আইনজীবী রাম জেঠমালানির প্রয়াণে গভীর শোকাহত। দিল্লি গেলে আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করতাম। ওঁর পরিবারকে সমাবেদনা জানাই।’ শোকবার্তায় জেঠমালানিকে ‘আইনি কিংবদন্তি’ (লিগ্যাল লেজেন্ড) হিসেবে উল্লেখ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। শোকপ্রকাশ করেছেন অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ব্রিটিশ-ভারতীয় শিল্পপতি গোপীচাঁদ হিন্দুজা।
১৯২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের তৎকালীন বম্বে প্রেসিডেন্সির সিন্ধ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাম জেঠমালানি। এলএলবি পাস করে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। দেশভাগের পর চলে আসেন বম্বেতে (অধুনা মুম্বই)। বাণিজ্যনগরীতে নতুন করে জীবন শুরু করেন তিনি।
বিতর্ক আর রাম জেঠমালানি ছিলেন সমার্থক। আইনজীবী হিসেবে বহু হাই প্রোফাইল মামলা লড়েছেন। ১৯৫৯ সালের কে এম নানাবতী ভার্সেস স্টেট অব মহারাষ্ট্র মামলা তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। এছাড়া শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে হর্ষদ মেহতা-কেতন পারেখ, ইন্দিরা-রাজীব গান্ধীর হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের, হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে লালকৃষ্ণ আদবানি, জেসিকা লাল হত্যা মামলায় কংগ্রেস নেতার ছেলে মনু শর্মা, সোহরাবুদ্দিন এনকাউন্টার মামলায় অমিত শাহর, বেআইনি সম্পত্তি মামলায় জয়ললিতা, টুজি কেলেঙ্কারিতে কানিমোঝি, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালুপ্রসাদ যাদব, খনি কেলেঙ্কারিতে বি এস ইয়েদুরাপ্পার আইনজীবী ছিলেন তিনি। এমনকী, ক’বছর আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির করা মানহানির মামলায় আম আদমি পার্টি সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হয়েও সওয়াল করেছিলেন জেঠমালানি। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে অবসর নেন।
আদালতের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে জনতা পার্টির হাত ধরে রাজনীতির আঙিনাতে পা রাখেন রাম জেঠমালানি। মুম্বই থেকে ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি এবং ১৯৮০ সালে বিজেপি সাংসদ হিসেবে সংসদে যান তিনি। অটলবিহারী বাজপেয়ি মন্ত্রিসভায় সাফল্যের সঙ্গে আইন এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে ২০০৪ সালে সেই বাজপেয়ির বিরুদ্ধেই লখনউ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালে বিজেপিতে ফিরে রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন। ২০১৩ সালে পার্টিবিরোধী মন্তব্য করায় তাঁকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিজেপি। যা নিয়ে দলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন জেঠমালানি। পরে বর্তমান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বিষয়টি দুঃখপ্রকাশ করায় তা মিটে যায়। তবে দলে আর ফেরেননি জেঠমালানি।