কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
কিন্তু সীমান্তের অবস্থা আরও জটিল। কারণ, কাশ্মীর নিয়ে গোপনে পাল্টা পদক্ষেপের পথেই হয়তো হাঁটতে চলেছে পাকিস্তান। আর সেই আঁচ পেয়ে ভারতও নিজের ঘুঁটি সাজানো শুরু করে দিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে থেকেই সেখানে বিপুল পরিমাণে বাহিনী পাঠাতে শুরু করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। সেই বাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকায় তো রয়েইছে, পাশাপাশি নতুন করে কৌশলী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে মোদি সরকার। লক্ষ্য একটাই, পাকিস্তানকে কোনওভাবে বাড়তে দেওয়া যাবে না। ইসলামাবাদ যদি কিছু বেগড়বাই করে, তার পাল্টা দেওয়ার জন্য ১০০ শতাংশ তৈরি থাকছে ভারত। কী করছে পাকিস্তান? উপগ্রহ চিত্র বলছে, গত শুক্রবার থেকে কাশ্মীর সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের তিনটি প্রধান নৌবন্দর প্রায় পুরোপুরি ফাঁকা। করাচি, গদর এবং ওরমারা বন্দরে কোনও রণতরী নেই। একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে যে উপগ্রহ চিত্র দেখানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ওরমারা বন্দরের জিন্না নেভাল বেস পুরো ফাঁকা। গদর বন্দরের অবস্থাও একই। একমাত্র করাচি বন্দরে তিনটি নৌজাহাজ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মত, এর অর্থ পাকিস্তানের গোটা নেভি ফ্লিট এখন সমুদ্রে। অথচ উপগ্রহ চিত্র বলছে, গত মাসেও এই তিন বন্দর নৌবাহিনীর জাহাজে পরিপূর্ণ ছিল।
এখানেই থেমে নেই ইসলামাবাদ। ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখার সবচেয়ে নিকটবর্তী রাওয়ালপিন্ডির নুর খান বায়ুসেনাঘাঁটিতে বৃহস্পতিবার থেকে উধাও সি-১৩০ বিমান। শুক্রবার সকালে সেখানে দু’টি সি-১৩০ বিমানকে দেখা গিয়েছে উপগ্রহ চিত্রে। সেগুলি উড়ানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অথচ, ৪ আগস্ট অর্থাৎ গত রবিবার বিকেলেও এই বায়ুসেনাঘাঁটিতে দেখা গিয়েছে সামরিক সরঞ্জাম বহনকারী এই বিমানগুলিকে।
পাকিস্তানের গোপন প্রস্তুতি ধরা পড়েছে আরও একটি তথ্যে। পাকিস্তান সংবাদমাধ্যমের খবর, ৫ আগস্ট থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে দু’দিনে চারবার ভিভিআইপি কপ্টারের উড়ান নজরে এসেছে। সূত্রের খবর, পাক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া নিজে এসেছিলেন সীমান্তে বাহিনীর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারত-পাক সীমান্তে আকাশপথে নজরদারি শুরু করেছে পাক বায়ুসেনা। ৫-৭টি যুদ্ধবিমানকে নিয়ে একটি জ্বালানিবাহী বিমান (রিফুয়েলার) টহল দিচ্ছে নিজেদের আকাশসীমায়। শুক্রবার সকালেও সেই দৃশ্য দেখা গিয়েছে বলে পাক সংবাদমাধ্যমের দাবি।
তবে চুপ করে বসে নেই ভারতও। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রাথমিকভাবে খোঁজখবর নিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সূত্রের খবর, বেশ কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, করভেট সহ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ট্যাঙ্কের সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ডের এক কর্তা জানিয়েছেন, অশান্তিপ্রবণ এলাকায় বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আকাশপথে নজরদারি বাড়িয়েছে বায়ুসেনাও। পাকিস্তানের যে কোনওরকম পদক্ষেপের উপযুক্ত জবাব দিতে বাহিনী যে প্রস্তুত, সেটা তাদের হাবেভাবেই পরিষ্কার। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এমনিতেই দেশজুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যু সেই সতর্কবার্তায় বাড়তি ইন্ধন জুগিয়েছে। কারণ, সামরিক সজ্জার আড়ালে জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দেওয়া পাকিস্তানের চিরকালের নীতি। তাই মুম্বই উপকূলে বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই পাকিস্তান একের পর এক এমন পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, যার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জড়িয়ে। প্রথম, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়াকে বহিষ্কার করা। দ্বিতীয়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত। তৃতীয়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাস-ট্রেন উভয় পরিষেবাই বন্ধ করে দেওয়া। অথচ, আমেরিকা-রাশিয়া দুই মহাশক্তিধর দেশই জানিয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা তাদের সংবিধানের মধ্যে থেকেই। অর্থাৎ, ভারতের অভ্যন্তরীণ কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে সংঘাতের পথই বেছে নিয়েছে পাকিস্তান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারই ইসলামাবাদকে সতর্ক করে আমেরিকা জানায়, পাল্টা আগ্রাসন দেখানো থেকে পাকিস্তানকে বিরত থাকতেই হবে। এর মধ্যে অন্যতম হল নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশে মদত দেওয়া বন্ধ করা। বরং নিজেদের মাটিতে যে সব জঙ্গি ঘাঁটিগুলি রয়েছে, সেগুলি ধ্বংস করতে উদ্যোগ নিক পাকিস্তান।’ কিন্তু পাকিস্তান যে সেই কথা শোনার দেশ নয়, সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্র থেকে সেই তত্ত্ব পরিষ্কার। অনুপ্রবেশে মদত তো চলছেই, সেইসঙ্গে তারা সামরিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে।