কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
একাধিক জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতায় ত্রিপুরায় একসময় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। সবথেকে খারাপ সময় গিয়েছে ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। জঙ্গি সংগঠনগুলি অসংখ্য সাধারণ মানুষকে খুন করেছে। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান ও সরকারি কর্মী। অপহরণ করে টাকা আদায়, তোলাবাজি প্রভৃতি ছিল। ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রকৃতি জঙ্গি সংগঠনগুলিকে সুবিধা দিয়েছিল। রাজ্যের তিনদিকে বাংলাদেশ। বড় অংশজুড়ে রয়েছে পাহাড় ও জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত এলাকা। বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে অপারেশান চালাত সংগঠনগুলি। এনএলএফটি ছাড়াও অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স, ত্রিপুরা ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স প্রভৃতি সংগঠন রাজ্যজুড়ে কার্যত তাণ্ডব চালাত। উপজাতিরাই এই সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিল। উপজাতি এলাকায় সংগঠনগুলি বেশি তৎপর ছিল। বেশিরভাগ হামলার শিকার হয়েছেন বাঙালিরা। জঙ্গি সংগঠনগুলির তাণ্ডবের জন্য বহু বাঙালি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এখন ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত এলাকায় বাঙালি বাসিন্দাদের সংখ্যা খুবই কম। জঙ্গি সংগঠনগুলির দাপটে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তবে ২০১০ সাল নাগাদ জঙ্গি সংগঠনগুলির দাপট অনেকটাই কমে যায়। ত্রিপুরার জঙ্গি সংগঠনগুলির কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিতদের মতে, এর পিছনে বাংলাদেশের সরকারের বড় ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি নষ্ট করে দেয় সেদেশের সরকার। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। ২০১২ সালের পর জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সেরকম কোনও তৎপরতা ত্রিপুরায় দেখা যায়নি। বহু জঙ্গি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন।
বিশ্বমোহন দেববর্মার নেতৃত্বাধীন এনএলএফটি একসময় ত্রিপুরায় বড় ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়েছে, ২০০৫ সালের পর থেকে এনএলএফটি-র হামলার ৩১৮টি ঘটনায় ২৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান এবং ৬২ জন সাধারণ মানুষের মূত্যু হয়েছে। এনএলএফটি-র নেতৃত্বে মূলত ছিলেন সুবীর দেববর্মা। দিল্লিতে চুক্তি সইয়ের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। তারপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে এনএলএফটি নেতারা দেখা করেন। বিশ্বমোহন দেববর্মা বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয় নন। তিনি আত্মসমর্পণ করেন কি না, সেদিকে নজর রাখছে সংশ্লিষ্ট মহল। এনএলএফটি-র একটি ছোট গোষ্ঠী এখন আলাদাভাবে কাজ চালাচ্ছে। তবে তাদের প্রভাব বিশেষ নেই।
নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকার কেন শান্তি চুক্তি করতে গেল, সেই প্রশ্ন উঠছে। ত্রিপুরার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল মনে করছে, আগামী বছর উপজাতি স্বশাসিত এলাকার ভোটের দিকে তাকিয়ে এটা করা হয়েছে। স্বশাসিত পরিষদের এখনও ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। পঞ্চায়েতের পর এবার স্বশাসিত পরিষদ দখল করতে চাইছে বিজেপি। স্বশাসিত পরিষদের নির্বাচনে কংগ্রেস, সিপিএম ছাড়া বিজেপি সরকারের শরিক আইপিএফটি তাদের প্রতিপক্ষ হবে। এনএলএফটি-কে মূলস্রোতে এনে উপজাতি এলাকায় বিজেপি প্রভাব বাড়াতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।