নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১৮ জুলাই: হাফিজ সঈদের গ্রেপ্তারের পর এবার আবার দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াবে ভারত। গতকাল রাতে দাউদ ইব্রাহিম ভাই ইকবাল কাসকরের পুত্র রিজওয়ান কাসকরকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বই পুলিস। মুম্বইয়ে একাধিক প্রোমোটার ও ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় চক্রের পাণ্ডা রিজওয়ান। গতকাল জানা গিয়েছে, রিজওয়ান মুম্বই বিমানবন্দর হয়ে দুবাই পালাচ্ছিল। সেই সময়ই তাকে ওই এয়ারপোর্টেই পাকড়াও করা হয়। কয়েকদিন আগেই দাউদ ঘনিষ্ঠ এক মাহিম আকবর ওরফে ফাহিম মাচমাচের মুম্বই গ্যাং-এর সদস্য আহমেদ রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জেরা করেই এই ইকবাল কাসকরের ছেলের সন্ধান পায় মুম্বই পুলিস। দাউদের ভাই ইকবাল কাসকর কয়েক বছর আগে দুবাই থেকে চলে আসে মুম্বই। তখনও দাউদের বোন হাসিনা পার্কার বেঁচে এবং পাকমোড়িয়া স্ট্রিটের গর্ডন হল বিল্ডিংয়ে ইকবাল ও হাসিনা থাকত। দেড় বছরের মধ্যে হাসিনার মৃত্যু হয় হৃদরোগে। আর তারপরই মুম্বইয়ের পওয়াই এলাকার এক প্রোমোটারের অভিযোগ পেয়ে পুলিস দাউদের ভাই ইকবালকে গ্রেপ্তার করে। ওই প্রোমোটারকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত ইকবাল। সেই থেকেই ইকবাল কাসকর থানে জেলে বন্দী। এবার তার ছেলেও গ্রেপ্তার হল মুম্বই পুলিসের হাতে।
এভাবেই দাউদের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে ভারত। একইভাবে চাপ বাড়ছে পাকিস্তানের উপরও। আগামী সপ্তাহেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকা সফরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম মার্কিন সফর এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এই প্রথম হবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। সেই সফরের আগেই পাকিস্তান গ্রেপ্তার করেছে হাফিজ সঈদকে। আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তান যথেষ্ট চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করায় বাণিজ্যিকভাবে পাকিস্তান যথেষ্ট কোণঠাসা হয়েছে। আর অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের ক্ষেত্রে পাকিস্তান যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না এই অভিযোগে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলিও বহুবার পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছে। সেই চাপের জেরেই সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদও পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পরই জয়েশ ই মহম্মদের সুপ্রিমো মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তকমা দিয়েছে। পাকিস্তান সেক্ষেত্রে আরও কোণঠাসা হয়। আমেরিকা সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমরান খানকে প্রশ্ন তুলবেন সন্ত্রাস নিয়ে। সেই প্রেক্ষিতে হাফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এবার ট্রাম্প প্রশাসন যাতে দাউদ নিয়েও পাকিস্তানকে চেপে ধরে সেই লক্ষ্যেই ভারত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে চাইছে। সেইমতোই প্ল্যান করছে বিদেশমন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মিলিত টিম। বিশেষ প্রমাণ হিসেবে দাখিল করা হবে সম্প্রতি করাচির এক অনুষ্ঠানে দাড়িগোঁফ না থাকা ক্লিন শেভ করা দাউদের একটি ছবি। সে তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী জাবির মোতিওয়ালা ওরফে জাবির সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলছে এরকম একটি ছবি ফাঁস হয়েছে। সেই ছবি থেকে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সবথেকে বড় লাভ হয়েছে বর্তমানে দাউদকে কেমন দেখতে সেটা জানতে পারা।