পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বৃহস্পতিবার সকাল তখন সাতটা। সবে ঘুম ভেঙেছে রফিকুলের। ‘বাঘ...বাঘ’ বলে প্রতিবেশীদের মৃদু চিৎকার চেঁচামেচিকে প্রথমে খুব একটা পাত্তাই দিচ্ছিলেন না তিনি। চারিদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশি। অসমের বাগোরি রেঞ্জের অন্তর্গত ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রফিকুলের প্রায় ডুবে যাওয়া বাড়ি লাগোয়া দোকান। সেখানে খুব বড়জোড় হলে আশ্রয় নিতে পারে বিষধর সাপ কিংবা ময়াল। তা বলে বাঘ! বাড়ির ভিতর একেবারে সেঁধিয়ে রফিকুল চোখ রেখেছিলেন দোকানঘরে। এ কি দেখছেন তিনি! দোকানের একটি আসবাবে গুঁটিসুঁটি মেরে শুয়ে রয়েছে পূর্ণবয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার! জল-যুদ্ধে বড্ড ক্লান্ত, অবসন্ন সে। মানুষের আস্তানায় ঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। আতঙ্কিত রফিকুলের তখন কোনও রা নেই!
ব্রহ্মপুত্রের জলে ভাসছে গোটা অসম। এই ক’দিনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জল থইথই কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, মানস ন্যাশনাল পার্ক কিংবা পবিতোরা অভায়ারণ্য। জলের তোড়ে ভাসছে বন্যপশু। জীবন-যুদ্ধে কেউ বাঁচছে। কেউ মরছে। এক সপ্তাহে হাতি, গণ্ডার, হরিণ সহ প্রায় ৩০টিরও বেশি পশু মারা গিয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকারি সূত্রে খবর, অসমের ৩৩ জেলার মধ্যে ২৯টি জেলাই বন্যাকবলিত।
বনদপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের প্রায় ৯৫ শতাংশ জলের নীচে। জীবজন্তুদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। কাজিরাঙা উদ্যান থেকে জলের তোড়ে ভেসে এসে ওই বাঘটি আশ্রয় নিয়েছিল রফিকুলের দোকান ঘরে। পরে বোমা ফাটিয়ে সেটিকে জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেএনপি বাগোরি রেঞ্জ অফিসার পঙ্কজ বোরা বলেছেন, ‘খবর পেয়েই ওই এলাকায় বনদপ্তরের কর্মীরা গিয়েছিলেন। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ বাঘটিকে ঘিরে রেখে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। জলে সাঁতার কাটতে কাটতে বড্ড অবসন্ন হয়ে পড়েছিল সে। খাবারও পাচ্ছিল না। পরে ওই বাড়ির সামনে বোমা ফাটিয়ে বাঘটিকে জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
ততক্ষণে অবশ্য মানুষের ঘরে ‘বাঘবন্দি’র ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট ইন্ডিয়ার তরফে রফিকুলের ঘরে বাঘের ছবি পোস্ট করার সঙ্গে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এদিন বাঘের পাশাপাশি বন্যার সঙ্গে লড়াইয়ের আরও একটি ছবিও নেটিজেনদের মনজয় করে। ওই ছবিটিতে একটি গণ্ডার শাবককে জলের সঙ্গে লড়াই করতে দেখা গিয়েছে। বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গণ্ডার শাবকটি। পরে সেটিকে বনদপ্তরের কর্মীরা কোনওক্রমে উদ্ধার করে। সেই ছবিটিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।