নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১৫ জুলাই: লোকসভায় পাশ হয়ে গেল এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) সংশোধনী বিল। সমর্থন করল কংগ্রেস, ডিএমকে সহ তৃণমূলও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন, এই বিলের বলে এবার থেকে বিদেশেও ভারত বিরোধী কোনও সন্ত্রাস হলে এনআইএ তদন্ত করতে পারবে। নাম না করে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ২০০৪ সালের পর থেকে দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলা বেড়েছে। আর তাতেই বাধ্য হয়ে ২০০৮ সালে এই বিল আনা হয়েছিল। কিন্তু বিলের বেশ কিছু জায়গায় খামতি ছিল বলেই সংশোধনী আনা হল। কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়। সন্ত্রাসবাদকে কোনওভাবেই প্রশয় না দিতেই এই বিল বলেই জানিয়েছেন অমিত শাহ।
তবে এই বিল আ঩ইনে পরিণত হলে মোদি সরকার যাতে কোনওভাবেই তার অপব্যবহার না করে সেই ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। বিলের আলোচনায় হায়দরাবাদের এমপি আসাউদ্দিন ওয়েসির সঙ্গে অমিত শাহর বাদানুবাদও হয়। ‘ধৈর্য্য ধরে শোনা অভ্যেস করুন। এভাবে বিলের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটানো চলবে না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি এবং ওয়েসির উদ্দেশে মন্তব্য করতেই উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে সরব হন তাঁরা।
অধীরবাবু বলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপির বক্তা সত্যপাল সিং তদন্তে পটু নয় বলে যাবতীয় এজেন্সিকে অভিযোগ করছেন, তা কী করে মানব! ওয়েসি নিজের আসনে উঠে দাঁড়িয়ে অমিত শাহকে বলেন, এভাবে আঙুল তুলে কথা বলবেন না। আমি আপনাকে ভয় পাই না। পাল্টা অমিত শাহও নিজের আসনে উঠে দাঁড়ান। বলেন, আমি কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না। স্রেফ বলেছি, বিরোধীদের কেউ যখন আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখছে তখন আমরা যেভাবে চুপ করে বসে শুনছি। আমাদের বেলাতেও তাই করুন। এরপরেই ওয়েসিকে চুপ করিয়ে দিয়ে অমিত শাহ বলেন, কারও মনে যদি ভয় থাকে, তাহলে আমার কী করার আছে!
এনআইএ বিলের সংশোধনী আনতেই পোটা আইনের প্রসঙ্গ উঠে। বিরোধী দলের বক্তাদের কমবেশি সকলেরই প্রায় বক্তব্য, এটি যেন কোনওভাবেই পোটার মতোই না হয়। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে ‘প্রিভেনশন অব টেররিজম অ্যাক্ট আনা হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর পরেই তা বাতিল করা হয়। তাছাড়া বিদেশে গিয়ে তদন্ত করার কথা বলা হলেও যেসব রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কোনও বিশেষ চুক্তি নেই, সেখানে তদন্ত হবে কী করে? পাকিস্তান যেভাবে ভারতে সন্ত্রাস করে, তার কোনও সুরাহা এই বিলের মাধ্যমে হবে কি? প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিলটিকে সমর্থন করলেও কোনওভাবেই এই বিলের অপব্যবহার করা চলবে না বলে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদী ঘটনার তদন্তে আমরা কোনও রাজনীতি করি না। তাই খাগড়াগড় কাণ্ডে নিঃশর্ত সাহায্য করেছি। আগামীদিনেও করব। তবে নারী পাচার সহ বেশ কিছু বিষয়ে যেখানে রাজ্যের মধ্যে কিছু ঘটবে সেখানে কেন্দ্র কোন যুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে লঙ্ঘন করবে? প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। ডিএমকে’র এমপি এ রাজা, কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি মতো বক্তাও বিলের আলোচনায় অংশ নেন। শেষে ভোটাভুটিও হয়। তবে অনায়াসেই জিতে যায় সরকার। লোকসভায় পাশের পর বিলটি এবার রাজ্যসভায় আলোচনার জন্য যাবে।