নয়াদিল্লি, ২৫ জুন (পিটিআই): ‘আজ কত তারিখ?’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশ্ন শেষ হতেই লোকসভার ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে আওয়াজ তুললেন সাংসদরা, ’২৫ জুন’। ‘কী হয়েছিল আজকের দিনে?’ শান্ত গলায় ফের প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর। উত্তর নেই। তার বদলে লোকসভার অভ্যন্তরে শোনা গেল শুধুই বেঞ্চ চাপড়ানির আওয়াজ। নিজের প্রশ্নের জবাব অবশ্য নিজেই দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তুলে আনলেন ৪৪ বছর আগের জরুরি অবস্থার কথা। কংগ্রেস আমলে জারি হওয়া জরুরি অবস্থা নিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে এভাবেই আক্রমণ শানালেন মোদি। সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, কোনও অবস্থাতেই দেশে আর জরুরি অবস্থা ফিরতে দেওয়া হবে না। দেশে এখন ইমার্জেন্সি নেই। তাই যখন তখন কোনও নেতাকে জেলে ভরা হয় না।
মঙ্গলবার অধিবেশনের শুরু থেকেই চেনা মেজাজে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একদিন আগেই, মোদি সহ বিজেপি সরকারের উদ্দেশে বিরোধীদের যথাযথ মর্যাদা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এদিন জবাবি ভাষণ দেন মোদি। বলেন, ‘লোকসভা অধিবেশন চলাকালীন কয়েকজন বারংবার প্রশ্ন করছেন, এটা কে করেছেন? ওটা কে করেছেন? আমি তাঁদের কাছে জানতে চাই, আজ ২৫ জুন। ৪৪ বছর আগে এই দিনে কে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন? কে আমাদের সংবিধানের মর্যাদাকে পদদলিত করেছিলেন? কেই বা বিচারব্যবস্থাকে ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছিলেন? শুধুমাত্র একজনের চেয়ার বাঁচাতে গোটা দেশকে জেলখানায় পরিণত করা হয়েছিল। আমরা সেই অন্ধকারময় দিনগুলি কখনই ভুলতে পারব না।’ একদিন আগেই লোকসভায় বক্তব্য রাখার সময় অধীর চৌধুরী জানান, দেশের যা কিছু ভালো হয়েছে, সবই মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর হয়েছে বলে বিজেপি দাবি করছে। এরপরেই কংগ্রেস আমলে উন্নয়নের খতিয়ান হিসেবে একাধিক পারমাণবিক চুল্লি, বিদ্যুৎ প্রকল্প, সর্দার সরোবর সহ একাধিক বাঁধ নির্মাণ, আইআইটি তৈরির কথা তুলে ধরেন। এদিন অধীরের সেই বক্তব্যের জবাব দিয়ে মোদি বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করেন, দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে মাত্র কয়েকটি নামেরই অবদান রয়েছে। তাঁরা শুধুমাত্র সেই নামগুলিই শুনতে চান। অন্য নামগুলি তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। কিন্তু আমরা গোটা বিষয়টিকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি। আমরা মনে করি ভারতের প্রত্যেক নাগরিক দেশের অগ্রগতির জন্য কাজ করেছেন।’ নাম না করে গান্ধী পরিবারের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে মোদি জানান, লোকসভায় যাঁরা এই প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা কখনও নরসিমা রাও বা মনমোহন সিংয়ের নাম উল্লেখ পর্যন্ত করেন না। ৪৪ বছর আগে কংগ্রেসের আমলে জরুরি অবস্থা জারির ঘটনায় দেশ যে কালিমালিপ্ত হয়েছিল, সেই দাগ কখনওই দূর করা সম্ভব নয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এদিনই প্রথম সংসদে বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি। উন্নত, শক্তিশালী ও নিরাপদ দেশ গড়ার জন্য সকলকে একজোট হয়ে কাজ করার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে আমি ভাবিত নই। আমি দেশবাসীর উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করি।’ প্রথমবার ভোটে জিতে যাঁরা সংসদে এসেছেন, তাঁদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ফের একবার এনডিএ সরকারের উপর ভরসা রাখার জন্য দেশবাসীকেও ধন্যবাদ জানান মোদি।