বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয় দেশজুড়ে। প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রেখে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন সরকারি চিকিৎসকরা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হন তাঁরা। চিকিৎসকদের এই আন্দোলনের জেরে কোথাও আংশিক, কোথাও আবার সারাদিনের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা লাটে ওঠে। চিকিৎসা না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েন রোগীরা। তবে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরুরি পরিষেবা চালু রেখেই তাঁরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। ইন্ডোর পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কোনও কর্তব্যরত চিকিৎসক এদিনের অবস্থান বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেননি বলে তাঁদের দাবি।
সোমবার রাতে কলকাতার এনআরএসে রোগী মৃত্যুকে ঘিরে আক্রান্ত হন দুই জুনিয়র চিকিৎসক। প্রতিবাদে রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে শুক্রবার দেশজুড়ে ‘প্রতিবাদ দিবসের’ ডাক দেয় আইএমএ। সেই মতো এদিন দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কালো ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদে শামিল হন। পাশাপাশি এনআরএস কাণ্ডে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের তরফে। যেমন, চণ্ডীগড় পিজিআইএমইআরের অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস-এর প্রেসিডেন্ট ডাঃ উত্তমকুমার ঠাকুরের অভিযোগ, ‘এভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জীবন বাঁচানোর লড়াই সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভূমিকা ঠিকঠাক ছিল না।’ এদিন ঠাকুরের নেতৃত্বে কর্মবিরতিও পালন করেছিলেন পিজিআইএমইআরের প্রায় এক হাজার দু’শো চিকিৎসক। মহারাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে চার হাজার জন সরকারি চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি। দ্য মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরসের তরফে বলা হয়েছে, সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রেখে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চিকিৎসকরা। হায়দরাবাদের সরকারি হাসপাতাল নিমসেও বন্ধ ছিল আউটডোর। উত্তরপ্রদেশেও ছিল একই চিত্র। রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতালেই কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন চিকিৎসকরা। রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ অমিত সিং জানিয়েছেন, সংগঠনের ১৮ হাজার ৭০০ চিকিৎসক এদিন কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছিলেন। দুপুরে জেলাশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন তাঁরা।
ওড়িশার ভুবনেশ্বরে এইমস, এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ, কটক হাসপাতাল সহ একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরাও এদিন কাজে যোগ দেননি। সকাল থেকেই আউটডোর বন্ধ ছিল প্রতিটি হাসপাতালেই। এইমসের চিকিৎসক সংগঠনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পড়শি রাজ্যে চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এদিন কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। তাতে শামিল ছিলেন ২৫০ জনেরও বেশি জুনিয়র চিকিৎসক। গোয়া, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের সরকারি হাসপাতালগুলিতেও ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে তামিলনাড়ু গভর্নমেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে মিছিলও করেন। এনআরএস কাণ্ডে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি তোলে গোয়া অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস।
প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে ছত্তিশগড়, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শুরু করে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানাতেও। ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল ডঃ বি আর আম্বেদকর মেমোরিয়াল হাসপাতালে এদিন সকাল থেকেই স্তব্ধ ছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা। কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছিলেন প্রায় ৪০০ জন জুনিয়র চিকিৎসক। তাঁদের সংগঠনের তরফে প্রেসিডেন্ট ভগবতীচন্দ্র ভার্মা বলেছেন, ‘এনআরএসে জুনিয়র চিকিৎসকদের হামলার ঘটনা কোনওভাবে মানা যায় না। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিতে হবে।’ রায়পুরের এইমসের চিকিৎসক থেকে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সমস্ত বিভাগের আউটডোর বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করা হয় বলে জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসক রাজেন্দ্র চৌধুরি। তবে এইমসের জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।