পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
রামকৃপালের ক্ষোভের কারণ ছিল একটাই। ২০১৪ সালে লালুপ্রসাদ পাটলিপুত্রের প্রার্থী করেছিলেন বড় মেয়ে ডাক্তার মিসা ভারতীকে। অথচ, পাটলিপুত্র থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন রামকৃপাল। সেই প্রস্তাব লালু খারিজ করে দিয়েছিলেন। রামকৃপাল বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। মিসা বা তিনি—কাউকেই প্রার্থী না করে অন্য কাউকে টিকিট দেওয়া হোক। সেটাও মানেননি লালু। শেষ পর্যন্ত লালুর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রামকৃপাল। এরপরই আরজেডি থেকে বেরিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন রামকৃপাল। সেই শুরু লড়াইয়ের। প্রথম দফায় বাজিমাত করেছেন। দ্বিতীয় দফাতেও ভাতিজি মিসাকে হারাতে মরিয়া চাচা রামকৃপাল।
পাটনা জংশন স্টেশন থেকে বেরিয়ে ডানদিকে কিছুটা এগলেই পড়বে গড়িয়াটোলি। এই তল্লাটের মানুষ অবশ্য বলে ‘এমপি গলি’। কারণ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামকৃপাল এই গলিরই বাসিন্দা। গলিতে ঢুকতেই সার দিয়ে হোটেল। স্থানীয়দের দাবি, এই শহরে আর কোনও গলিতে এত হোটেল নেই। এক দোকানদারের কথায়, এই গলিটা অনেকটা দেবস্থানের মতো। সুখে-দুঃখে মানুষ এমপি সাহেবের কাছে ছুটে আসেন এবং তিনি যথাসাধ্য করেন। পাটনার এক অটোচালক বলছিলেন, ‘জনসংযোগই রামকৃপালের আসল অস্ত্র। দেশে কোন কোন এমপিকে তাঁর কেন্দ্রের লোকেরা সবচেয়ে বেশি চাক্ষুষ করেছেন, সেই তালিকা তৈরি হলে প্রথম দশজনের মধ্যে থাকবেন রামকৃপাল।’ কথাটা যে মিথ্যে নয়, একটু আগেই তার প্রমাণ পেয়েছি। সকাল ন’টা। গলির মধ্যে গিজ গিজ করছে মানুষ। অধিকাংশেরই বয়স তিরিশের নীচে। ভিড় ঠেলে পৌঁছনো গেল এমপি সাহেবের কাছে। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের কথা শুনছেন। তার মধ্যেই নানাজনের ফোন। এসব সেরে প্রচারে বের হওয়ার ব্যস্ততা।
রামকৃপাল এখন নিজেকে মোদির সঙ্গে তুলনা করেন। হয়তো সচেতনেই। বলেন, ‘দেশের মানুষ এবারও যাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন, তিনি একজন গরিব ঘরের ছেলে। আমিও গরিব ঘরের ছেলে। কোনও রাজা-রানির নই।’ তাঁর সাফ কথা, ‘আমার লড়াই পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লোকতন্ত্রের। সেই লড়াইয়ে এবারও জিতব।’ পাঁচ বছর আগের পুরনো দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এখনও গনগনে। কেবল আরজেডি নয়, মহাজোটের প্রার্থী মিশা। এলাকায় রয়েছে নোট বাতিল, জিএসটি চালুর প্রভাবও। এবারে কী হবে? তাঁর জবাব, ‘গরিবের বেটা গতবারও জিতেছে। এবারও জিতবে। লড়াই কঠিন নয় মোটেই। লিখে নিন, গতবার মোদি ঢেউ ছিল। এবার সুনামি হবে।’
রামকৃপাল জানেন, মিসা নন, তাঁর লড়াইটা আসলে একদা রাজনৈতিক গুরু তথা ‘বড় ভাই’ লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে। আরজেডি ছাড়া নিয়ে তাঁর সোজাসাপ্টা যুক্তি, ‘সামাজিক ন্যায়ের থেকে পারিবারিক ন্যায়কে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছিলেন লালুপ্রসাদ। যা মেনে নিতে পারিনি।’ আর আরজেডির দাবি, চাচা রামকৃপাল সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আরজেডির প্রদেশ মহাসচিব কুমার রাহুল সিংয়ের কথায়, ‘গত পাঁচ বছরে এলাকায় যা কাজ করার ছিল, তা হয়নি। গত লোকসভা ভোটের আগে রামকৃপাল যাদব আরজেডিতে ছিলেন। তার কিছুটা সুফল পেয়েছিলেন ভোটে। এবার আর তেমনটা হবে না। মানুষ বুঝে গিয়েছেন। প্রচারেও মানুষের ব্যাপক সাড়া। মিসা দেবীর জয় নিশ্চিত।’
তবে পাটলিপুত্র নিয়ে আরজেডির হারানোর কিছু নেই। ২০০৮ সালে এলাকা পুনর্বিন্যাসে জন্ম হয় পাটলিপুত্র কেন্দ্রটির। এই আসনে ২০০৯ সালে প্রার্থী হয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব নিজে। সেই বছর জেডিইউয়ের রঞ্জনপ্রসাদ যাদবের কাছ হেরেছিলেন লালুপ্রসাদ। এবারে এই কেন্দ্রে ‘পারিবারিক’ দ্বন্দ্বে তপ্ত নির্বাচনী পরিবেশ। ভোট ময়দানে চাচা না ভাতিজি, শেষ হাসি কে হাসবেন, তা নিয়েই জল্পনা এখন তুঙ্গে।
কেন্দ্র: পাটলিপুত্র
২০১৪ সালে জয়ী: রামকৃপাল যাদব
ভোটের দিন: ১৯ মে