বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তবে কি ভয় পেয়ে গেলেন রাহুল-সোনিয়া? নাকি হাতের তাস এখনই খেলে ফেলতে চাইল না কংগ্রেস হাইকমান্ড? গতকাল পর্যন্ত স্বয়ং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলে এসেছিলেন ‘দল চাইলে তিনি নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়তে রাজি।’ সেই মতো গঙ্গাবঙ্গে নৌকা মিছিলে স্রেফ বারাণসী সফরই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় নরেন্দ্র মোদিকে বারাণসীর প্রসঙ্গ টেনেই আক্রমণ করেছেন। প্রকাশ্যে তো বটেই, বুধবার রাতে কংগ্রসের কোর কমিটির কাছেও প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য ছিল, হারজিত যাইহোক, বারাণসী থেকে তিনি লড়তে রাজি। কিন্তু দলের ন’ সদস্যের কোর কমিটি শেষমেশ রাজি হয়নি। সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রিয়াঙ্কা বারাণসীতে লড়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, তিনি বারাণসীতে লড়লে, মোদির পক্ষে সমগ্র দেশে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচার সম্ভব নয়। কিন্তু সেই যুক্তি মানতে চাননি দাদা রাহুল ও মা সোনিয়া। লোহিয়া তেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এমনকী অটলবিহারীর নাম উল্লেখ রাহুল বলেন, সেই নেহরুর সময় থেকেই বিরোধীদের মর্যাদা দিয়ে এসেছে কংগ্রেস। তাই বোনের ওই যুক্তি চলে না। প্রিয়াঙ্কা পাল্টা বলেন, মোদি আর যাই হন লোহিয়া বা অটল নন। কিন্তু রাহুল ও সোনিয়া সেকথা মানতে চাননি। তাঁরা বারাণসী থেকে প্রিয়াঙ্কার দাঁড়ানোর পক্ষে মত দেননি। ফলে মোদি-প্রিয়াঙ্কা হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের সেখানেই ইতি হয়ে যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে বারাণসী থেকে প্রার্থী না করার পিছনে মূলত চারটি কারণ রয়েছে। ১. সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর সঙ্গে বোঝাপড়া হয়নি। কংগ্রেস চেয়েছিল মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা হোন সর্বসম্মত প্রার্থী। তা হয়নি। সমাজবাদী পার্টি প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। ২. প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেসের স্টার ক্যাম্পেনার। বারাণসীতে তাঁকে প্রার্থী করলে অন্যত্র তাঁকে দিয়ে প্রচারে ব্যাঘাত ঘটবে। প্রার্থী হলে বারাণসীতেই ব্যস্ত হয়ে যাবেন প্রিয়াঙ্কা। ৩. নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী। গতবার ৫ লক্ষ ৮১ হাজার ২২ ভোট পেয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৮৪ ভোটে হারিয়েছিলেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করালে অতি ‘অ্যাডভেঞ্চারিজম’ হবে ঠিকই, কিন্তু জয় অনিশ্চিত। ৪. সংসদে আদতে সংখ্যাই সুপ্রিম। তাই পরে উপনির্বাচনে আমেথি থেকে প্রিয়াঙ্কার জিতে আসার অঙ্ক অনেক বেশি সহজ বলেই মনে করছে কংগ্রেস।
উত্তরপ্রদেশের আমেথি এবং কেরলে ওয়ানাড় থেকে এবার প্রার্থী হয়েছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের হিসেব, দুটি জায়গা থেকেই জিতবেন কংগ্রেস সভাপতি। কিন্তু আদতে একটি আসন তাঁকে ছাড়তেই হবে। সেক্ষেত্রে আমেথি ছেড়ে দিলে সেখানে উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রার্থী করলে জয় অনেকটাই নিশ্চিত। যা আদতে সংসদে কংগ্রেসের একটি সংখ্যা বাড়াবে। তাই প্রিয়াঙ্কার নাম সামনে রেখে বিজেপি তথা রাজনৈতিক মহলকে রাহুল গান্ধীর ভাষায় ‘সাসপেন্স তৈরি করলেও শেষমেশ ভূমিপুত্র পাঁচবারের প্রাক্তন বিধায়ক অজয় রাইকে বারাণসীতে প্রার্থী করল কংগ্রেস। বিজেপির টিকিটে চারবার এবং ২০১২ সালে দলে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের টিকিটে একবার বিধানসভায় জিতেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে লোকসভায় মোদির বিরুদ্ধে লড়ে পেয়েছিলেন মাত্র ৭৫ হাজার ৬১৪ টি ভোট। ২০১৭ সালে বিধানসভাতেও হেরেছেন।